Accessibility Tools

বইয়ের নাম - লেখক
হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য গবলেট অব ফায়ার (৪) – জে. কে. রাওলিং
হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য গবলেট অব ফায়ার (৪) – জে. কে. রাওলিং
0/37
হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য গবলেট অব ফায়ার (৪) – জে. কে. রাওলিং

১৭. দ্য ফোর চ্যাম্পিয়নস

১৭. দ্য ফোর চ্যাম্পিয়নস

হ্যারি চেয়ারে বসে আছে। গবলেট অব ফায়ার হ্যারি পটারকে চতুর্থতম চ্যাম্পিয়ন বাছাই করেছে। ও জানে গ্রেট হলের শত শত চোখ ওর দিকে তাকিয়ে রয়েছে। ও অসম্ভব অবাক হয়ে গেছে। হতবুদ্ধি হয়ে গেছে। ও নিশ্চয়ই স্বপ্ন দেখছে। ও কী ঠিকমত নাম শুনতে পায়নি। কী করে সম্ভব? ওর নাম কী করে এখানে এলো!

আশ্চর্য! ও কারও অভিনন্দন শুনতে পেল না। কুব্ধ মৌমাছি দলের মত সকলের দৃষ্টি যেন ওকে সূচের মত হুল ফোঁটাচ্ছে। কেউ কেউ (বাইরের স্কুলের ছেলে–মেয়েরা) চেয়ার থেকে উঠে ওকে দেখছে।

প্রফেসর ম্যাকগোনাগল চেয়ার ছেড়ে উঠে লাডো বেগম্যান আর প্রফেসর কারকারফের কাছে গিয়ে ফিস ফিস করে কিছু বলার পর প্রফেসর কারকারফ ডাম্বলডোরের কানে কানে কিছু বললেন। ডাম্বলডোর কথা শুনতে শুনতে মৃদু হাসলেন, ভুরু কোচকালেন।

হ্যারি, রন আর হারমিওনের দিকে তাকাল। ওরা সকলে দেখল গ্রিফিন্ডর হাউজের সব ছেলেমেয়েরা ওর দিকে হাঁ করে তাকিয়ে রয়েছে।

–আমি তো আমার নাম দিইনি, হ্যারি ভাসা ভাসা বলল–তোমরা তো সকলেই জান, আমি নাম দিইনি।

ওরাও হতবম্ব হয়ে গেছে।

প্রফেসর ডাম্বলডোর, ম্যাকগোনাগলকে ঈষৎ মাথা হেলিয়ে বললেন–হ্যারি পটার! দ্বিতীয়বার ডাকলেন; হ্যারি! এদিকে এস… অনুগ্রহ করে যদি আসতে চাও।

হারমিওন ওর কানে কানে কিছু বলে সামান্য কনুইয়ের খোঁচা দিয়ে বলল যাও… তোমায় ডাকছেন।

 হ্যারি দাঁড়াল। ঝুলন্ত আলখেল্লাটা একটু গুটিয়ে নিয়ে এগোতে গিয়ে হোঁচট খেল। গ্রিফিন্ডর ও হাফপাফের টেবিলের মাঝখান দিয়ে এগিয়ে যেতে লাগল। যেতে যেতে মনে হল ওকে যেন অনেকটা পথ হাঁটতে হবে। শত শত দৃষ্টির দিকে একবারও ও তাকাল না। গুঞ্জন ধীরে ধীরে বাড়াতে লাগল। ডাম্বলডোরের টেবিলের কাছে পৌঁছতে যেন পুরো একটি ঘণ্টা লেগেছে এমনই ওর মনে হল।

ডাম্বলডোরের মুখে হাসি নেই। গম্ভীর স্বরে তিনজনকে যেমন বলেছিলেন তেমনিভাবে বললেন–ওই দরজা দিয়ে অন্য ঘরে যাও।

হ্যারি শিক্ষকদের টেবিলের পাশ দিয়ে যেতে যেতে দেখল শেষ প্রান্তে বসে রয়েছে হ্যাগ্রিড। হ্যাগ্রিডের দিকে তাকিয়ে হাসল। গ্রেট হল থেকে ডাম্বলডোরের নির্দেশিত ঘরে ঢুকে দেখল ঘরটা খুবই ছোট। দেওয়ালে পরপর লাইন করে সাজানো রয়েছে পেন্টিংস, জাদুকরিদের প্রোট্রেট অতি মনোরম একটি ফায়ারপ্লেস থেকে গনগন করে আগুন জ্বলছে।

প্রোট্রেটদের মুখের দিকে তাকিয়ে মনে হল ওরা যেন ওর দিকে তাকিয়ে রয়েছে। এক বিশীর্ণ জাদুকরী আর ফ্রেমের মধ্যে থেকে বেরিয়ে এসে অন্য এক ফ্রেমের মধ্যে ঢুকে গেল। সেই ফ্রেমে একটা প্রোট্রেট–তার গোঁফ অক্টোপাসের মত। সেই কৃষ্ণকায়া জাদুকরী ওর কানে কানে কিছু বলল।

আগুনের কাছে গোল হয়ে বসেছিল; ক্রাম, ডেলাকৌর, আর ডিগরি। আগুনের শিখার আলো ওদের মুখে এসে পড়ছে। ওদের মুখের চেহারা প্রভাবিত করার মত। ক্রাম ওদের সঙ্গে বসে থাকলেও সামান্য দূরত্ব রেখেছে। চুল্পির উপরের তাকে হেলান দিয়ে বসেছে। সেরিক দুহাত পেছনে রেখে দাঁড়িয়ে আগুনের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। হ্যারি ঘরে ঢুকলে ডেলাকৌর ওর দিকে তাকাল। ওর মাথার রূপালী লম্বা চুলগুলো মুখের ওপর থেকে মাথা ঝাঁকিয়ে সরাল।

ডেলাকৌর, হ্যারিকে দেখে বলল–আমাদের ডেকেছে নাকি? মেয়েটি ভেবেছে হ্যারি ওদের হলে ডেকে নিয়ে যেতে এসেছে। হ্যারি বুঝতে পারলো না কেমন করে ব্যাপারটা ওকে জানাবে। ও নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইল–ওদের মুখের দিকে তাকিয়ে।… তাকিয়ে থাকতে থাকতে মনে হল ওরা কত লম্বা।

দরজার কাছে পদশব্দ শুনে হ্যারি পিছনে তাকিয়ে দেখল লাডো বেগম্যান ঘরে ঢুকছে। হ্যারির হাত ধরে লাড়ো ঘরে এগিয়ে গেলেন।

হ্যারির হাত চেপে ধরে বললেন, সুন্দর, দারুণ সুন্দর! বাকি তিনজনের দিকে তাকিয়ে অতি সুন্দরভাবে বললেন–ভদ্রমহোদয় ও মহিলা, আমি কী এর পরিচয় করিয়ে দিতে পারি? অবিশ্বাস্য মনে হলেও… হ্যারি এখন চতুর্থ ট্রাইউইজার্ড চ্যাম্পিয়ন।

ভিক্টর ক্রাম সোজা হয়ে বসল। ওর বদমেজাজী মুখ কাল হয়ে গেল হ্যারির দিকে তাকিয়ে। সেডরিক নির্বিকার। হ্যারি বেগম্যানের মুখের দিকে তাকাল। মনে হল ব্যাগম্যান যা বলল তা যেন ঠিক শুনতে পায়নি। ডেলাকৌর মৃদু হেসে মাথা ঝাঁকুনি দিয়ে মুখের ওপর পড়া চুলগুলো সরালো। মুখে মৃদু মৃদু হাসি, ও বলল, ওহ্ দারুণ জোক, মিস্টার বেগমেন।

জোক? বেগম্যান একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে একই কথা বললেন–না, না, মোটেই না! গবলেট অব ফায়ার থেকে হ্যারির নাম বেরিয়ে এসেছে!

ক্রামের মোটা ভুরু সামান্য কুঞ্চিত হল। সেডরিক যেমন আগে তাকিয়েছিল তেমনই দ্রভাবে হ্যারির মুখের পানে তাকিয়ে রইল।

ফ্লেউর ডেলাকৌর ভুরু কুঁচকালো–আমার মনে হয় কোনও একটা ভুল হয়ে গেছে। কথাগুলো বেগম্যানকে অবজ্ঞার স্বরে বলল।–ওকে দেখে তো মনে হয় প্রতিযোগিতা করে সিলেক্ট হয়েছে। বয়সও মনে হয় কম।

বেগম্যান বলল–সত্যি আশ্চর্য ব্যাপার; হ্যারির দিকে তাকিয়ে থুতনি চুলকোতে লাগল। মিটি মিটি হাসতে লাগল।… কিন্তু এবছর থেকে তো বয়স সম্বন্ধে কড়াকড়ি হয়েছে… বিশেষ সতর্কতার জন্য… কিন্তু বুঝতে পারছি না, গবলেট থেকে কেমন করে ওর নাম ছিটকে বেরিয়ে এল।… আমার মনে হয় কোনও রকম কিছু উল্টো রাস্তা ধরে হয়েছে… রুলে স্পষ্ট করে লেখা আছে সতের বছরের কম হলে চলবে না।

আবার ঘরের দরজা খুলল, বেশ বড়সড় একটা দল ঘরে ঢুকল। প্রফেসর ডাম্বলডোর, মি. ক্রাউচ, প্রফেসর কারকারফ, ম্যাডাম ম্যাক্সিম, ম্যাকগোনাগল ও স্নেইপ। ঘরের দেওয়ালের অপরদিকে অনেক ছেলেমেয়ের গুঞ্জন শুনতে পেল হ্যারি। ম্যাকগোনাগল দরজাটা বন্ধ করে দিলেন।

–ম্যাডাম ম্যাক্সিম বললেন, তারা বলছে এই ছোট ছেলেটাকে প্রতিযগিতায় নামতে হবে!

ছোট ছেলে বলাতে হ্যারির মনে দারুণ ঘা দিল।

অপমানিত তো বটেই। পুঁচকে ছেলে ও?

ম্যাডাম ম্যাক্সিম সোজা হয়ে দাঁড়ালেন। তখন তাকে আরও লম্বা দেখাল। এত লম্বা যে ঝাড়ু লণ্ঠনে মাথা ঠেকে গেল। বুক দুটো আরও ফুলে উঠল।….

একটু উত্তেজিত হয়ে বললেন-এর মানে কী প্রফেসর ডাম্বলডোর? প্রফেসর কারকারফ বললেন–ডাম্বলডোর সমস্ত ব্যাপারটা আমাকে জানতে হবে। হোগার্ট থেকে কেন দুজন হবে? আমার মনে হয় রুলস খুব সম্ভব ভাল করে পড়িনি।

তীব্র বিরক্তিতে হাসলেন কারকারফ।

ম্যাক্সিম ওর বিরাট মাংসল হাতটা ডেলকৌরের কাঁধে রেখে বললেন–অসম্ভব, হোগার্ট থেকে দুজন হতে পারে না… খুবই অন্যায়–অবিচার হবে। ডেলাকৌরের কাঁধে রাখা হাতের আঙ্গুল থেকে নানা পাথরের আংটি আগুনের আলোতে ঝলসে উঠল।

কারকারফ বললেন–ডাম্বলডোর আপনার নিয়ম অনুসারে–বয়স বেঁধে দেওয়াতে ছোট ছেলেদের সিলেক্ট হবার কোনও সুযোগ নেই। কথাটা বলে আবার হাসলেন, ঠাণ্ডা চোখের দৃষ্টি আরও যেন ঠাণ্ডা হয়ে গেল। আগে জানলে আমরা আরও বাছাই করা ছেলে–মেয়ে নিয়ে আসতাম।

ডাম্বলডোর দৃঢ় অকম্পিত স্বরে বললেন–আপনাদের অশেষ ধন্যবাদ। স্নেইপ চুপ করে রইলেন। চোখে–মুখে তার মজাদার হাসির ছাপ!

প্রফেসর ডাম্বলডোর হ্যারির দিকে একদৃষ্টে তাকিয়েছিলেন…. হ্যারিও তাকে দেখছিল। ডাম্বলডোর তার অর্ধচন্দ্রের মত চশমার পেছনে উজ্জ্বল দুই চোখে কি জবাব দিতে চাইছেন।

–হ্যারি তুমি কী গবলেট অব ফায়ারে তোমার নাম দিয়েছিলে? ডাম্বলডোর খুব শান্তভাবে প্রশ্ন করলেন।

হ্যারি বলল–না।….. আবার প্রশ্ন করলেন–অন্য কেউ তোমার হয়ে জমা দিয়েছিল?

প্রশ্ন করার সময় প্রফেসর কারও দিকে তাকালেন না।

না–হ্যারি জোর দিয়ে বলল। ম্যাক্সিম বললেন–অবশ্যই ও মিথ্যে কথা বলছে।

স্নেইপ কিছু বলল না; কিন্তু ঘাড় নাড়ল।

প্রফেসর ম্যাকগোনাগল বললেন–ও নিশ্চয়ই বয়সসীমা লাইন পার হয়নি। আমরা সকলেই এই ব্যাপারে একমত হতে পারি।

–ডাম্বলডোর মনে হয় বয়সসীমা লাইন মার্ক করার সময় কোনও একটা ভুল করে ফেলেছেন, মাদাম ম্যাক্সিম বললেন।

প্রফেসর ম্যাকগোনাগল রেগে গিয়ে বললেন–ডাম্বলডোর আপনি খুব ভাল করেই জানেন আপনি কোনও ভুল করেননি! আশ্চর্য কি সব অর্থহীন কথাবার্তা! আমার বিশ্বাস হ্যারি কোনমতেই লাইন পার করেনি শুধু নয়, কোনও বয়স্ক ছাত্র ওর নাম জমা দেয়নি। ডাম্বলডোরও এই কথা বিশ্বাস করেন। এটাই সার কথা।

ম্যাকগোনাগল ক্রোধের সঙ্গে স্নেইপের মুখের দিকে তাকালেন।

কারকারফ আবার তোষামোদের গলায় বললেন–মি. ক্রাউচ… মি. বেগম্যান, আপনারা আমাদের ন্যায়বান বিচারক। আশাকরি আপনারা মেনে নেবেন হ্যারি পটারের বাছাই অতি নিয়ম বিরুদ্ধ হয়েছে।

বেগম্যান রুমাল দিয়ে মুখ মুছলেন… ক্রাউচের দিকে তাকালেন। ক্রাউচ সামান্য অন্ধকারের মধ্যে দাঁড়িয়েছিলেন। তাও অর্ধেক মুখ পরিষ্কারভাবে দেখাচ্ছিল। একটু আতঙ্কগ্রস্ত মুখের ভাব। আধা অন্ধকার ওর বয়স যেন আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। কেমন যেন কঙ্কালের মত। যখন কথা বললেন তখন অস্বাভাবিকত্ব চোখে পড়েন–আমরা অবশ্যই রুল মেনে চলব। রুল পরিষ্কার বলেছে–গবলেট অব ফায়ার থেকে যাদের নাম বেরিয়ে আসবে অবশ্যই তাদের টুর্নামেন্টে নির্বাচিত প্রতিযোগী হিসেবে স্বীকার করতেই হবে।

বেগম্যান বললেন–ভাল কথা, আমরা রুল বুক সম্বন্ধে আগাগোড়া ওয়াকিবহাল। কারকারফ ও মাদাম ম্যাক্সিমের দিকে এমনভাবে তাকালেন যেন আলোচনা ওই খানেই শেষ করতে হবে। আর তর্ক–বিতর্ক করে লাভ নেই।

কারকারফ তার তোমোদহীন গলায় বললেন–তাহলে আমি দাবি করছি আমার স্কুলের বাকি ছেলেরা আবার নাম দিক। তার মুখটি অতি অসুন্দর সন্দেহ নেই–আমাদের আবার গবলেট অব ফায়ার নতুনভাবে রাখতে হবে। আমরা চাই প্রতিটি স্কুলে অন্তত দুটি প্রতিযোগী হোক।… ডাম্বলডোর এটাই হবে সুস্থ বিচার।

কিন্তু কারকারফ এটা আপনার অভিমত তো কার্যকরী হবে বলে মনে হয়। টুর্নামেন্টের আগে গবলেট অব ফায়ারকে পাওয়াতো সম্ভব হবে না, বেগম্যান বললেন।

–তাহলে তো ডারমস্ট্রাংগতো প্রতিযোগিতায় থাকবে না, কারকারফ একটু প্যাঁচ দিতে চাইলেন।

দরজার গোড়া থেকে কে যেন গম্ভীর গলায় বলল–ফাঁকা আওয়াজ। আপনি ইচ্ছে করলে স্কুলের ছেলে–মেয়েদের নিয়ে দেশে চলে যেতে পারেন না। আপনার চ্যাম্পিয়নও নয়। তাকে প্রতিযোগিতায় থাকতেই হবে। ম্যাজিক্যাল দায়বদ্ধতা, এই কথা মনে রাখবেন।

মুডি কথাগুলো বলতে বলতে ঘরে ঢুকেছেন। কাঠের পায়ের শব্দ করতে করতে ফায়ার প্লেসের কাছে দাঁড়ালেন। হাঁটার সময় কাঠের পায়ের প্রতিটি পদক্ষেপে ক্র্যাক ক্র্যাক শব্দ হয়।

মুডি বললেন–কারকারফ এটা খুবই সোজা কথা। প্রতিযোগিদের শেষ পর্যন্ত থাকতেই হবে। কেউ যদি গবলেটে হ্যারির নাম দিয়ে থাকে তো জেনেই দিয়েছে, ও যদি সিলেক্ট হয় তাহলে টুর্নামেন্টের শেষ পর্যন্ত থাকতে হবে ওকে।

–হোগার্ট যাতে দুটো চ্যাম্পিয়ন পায় সেই ভেবেই নাম দিয়েছে, মাদাম ম্যাক্সিম বললেন। একটা আপেলে দুটো কামড়।

কারকারফ বললেন, মাদামের সঙ্গে আমি একমত। এই রকম বেআইনি ব্যাপার বলবৎ থাকলে আমি বাধ্য হয়ে ম্যাজিক মন্ত্রণালয়ে নালিশ করব।… এবং ইন্টারন্যাশনাল কনফেডারেশনেও।

–যদি কারও নালিশ করার কিছু থাকে তো… আছে পটারের, মুডি হুংকার দিয়ে বলল। এখনও পর্যন্ত ও একটা কথাও বলেনি।

–ও কেন নালিশ করবে? ফ্লেউর ডেলাকৌর রাগে ফেটে পড়ল। মেঝেতে পা ঠুকল। ও প্রতিযোগিতা করার সুযোগ পেয়েছে ফাঁকতালে। আমরা সপ্তাহের পর সপ্তাহ আশায় বুক বেঁধে রয়েছি এক হাজার সোনার মুদ্রা!

এটা পাবার জন্য অনেকে প্রাণ দিতে পারে।

মুডি বললেন–হতে পারে, কেউ কেউ হয়ত ভাবছে পটার এক হাজার গ্যালিয়নের জন্য প্রাণ দিতে পারে।

কথাটা শোনার পর কারও মুখে একটিও শব্দ নেই।

লাডো বেগম্যান খুবই উদ্বিগ্ন। ঘরময় পায়চারি করতে করতে বললেন–আরে মুডি ও ম্যান… এসব কি কথা বলছ!

কারকারফ উচ্চস্বরে বললেন–প্রফেসর মুডি মনে করেন তার সকালটা ব্যর্থ হবে যদি না তাকে খুন করার দুটি ষড়যন্ত্র আবিষ্কার করতে না পারেন।… ইদানীং তিনি তার ছাত্রদের হত্যার বিরুদ্ধে প্রতিরোধের শিক্ষা দিচ্ছেন… ডার্ক আর্টসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের শিক্ষা… যাকগে, তাহলেও ডাম্বলডোর এ সম্বন্ধে নিশ্চয়ই আপনার কিছু বক্তব্য আছে।

–আমি বুঝতে পেরেছি মুডি হুংকার দিয়ে বললেন–সব কিছু দেখে মনে হয় কোনও ধূর্ত জাদুকর ওর নামটা গবলেটে দিয়েছে।

মাদাম ম্যাক্সিম বিরাট মাংসল হাতটা তুলে বললেন–আহ্ আপনার এই অভিযোগের সমর্থনে কিছু আছে?

–হ্যাঁ, কারণ তারা একটা শক্তিশালী জাদুর বলে সকলের দৃষ্টির বাইরে কিছু করছে, মুডি বললেন–দারুণ একটা শক্তিশালী চার্মে গবলেটকে বোকা বানিয়েছে…. টুর্নামেন্টে তিনজনের বেশি প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে পারে না সেটা বুঝতে দেয়নি… এমনই প্রভাবশালী চার্ম!…. আমার ধারণা ওরা পটারের নাম চতুর্থ একটি স্কুলের পক্ষে দিয়েছে… এমন ভাবে দিয়েছে যেন সেই স্কুলে পটার ছাড়া অন্য কেউ তার সমকক্ষ নয়।

কারকারফ ব্যঙ্গ করে বললেন–মুডি অপূর্ব আপনার চিন্তাশক্তি… দারুণ গবেষণা। শুনেছি… কিছুদিন আগে আপনি মাথায় এক সরীসৃপের ডিম মনে করে জন্মদিনের উপহার একটা বড় ঘড়ি ভেঙ্গে ছিলেন। বুঝতেই পারছেন–আপনার এইসব যুক্তিতর্ক ধর্তব্যের মধ্যে আনছি না।

মুডি চিবিয়ে চিবিয়ে বললেন–সত্যিই তো, স্বার্থ বুঝে জটিল ব্যাপার অতি লঘু হয়ে যায়।…কারকারফ কাল জাদুকরের কারসাজি ধরা আমার কাজ।… অ্যালস্টর! ডাম্বলডোর মৃদু ধমকের সুরে বললেন। হ্যারি অ্যালস্টর শুনে কার উদ্দেশ্যে ডাম্বলডোর নামটা বললেন প্রথমে বুঝতে পারেনি। পরে মনে হল মুডির প্রথম নাম হচ্ছে অ্যালস্টর। মুডি চুপ করে গেলেন; কিন্তু কারকারফকে কিছু বলতে পেরেছেন এটাই তার মুখে খুশির ভাব ফুটে উঠল। কারকরফের মুখ এখন আগুনের মত জ্বলছে।

ডাম্বলডোর গম্ভীর মুখে বললেন–কেমন করে ব্যাপারটা ঘটল ঠিক বুঝতে পারছিনে। সবকিছু বিবেচনা করে আমাদের পটারের নাম মেনে নেওয়া ছাড়া অন্য কোনও পথ নেই।… তাহলে এটাই হল যে টুর্নামেন্টে হোগার্ট স্কুল থেকে সেডরিক আর হ্যারি দুজনেই অংশগ্রহণ করছে। অতএব আর কিছু নয়।

–আহ্… কিন্তু ডাম্বলডোর!

–প্রিয় ম্যাক্সিম আপনার যদি কোনও বিকল্প থাকে তো বলতে পারেন।

মাদাম ম্যাক্সিম শুধু হাসলেন। একটি কথাও বলবেন না। একমাত্র মাদাম ম্যাক্সিম নয়–স্নেইপকে দেখে মনে হয় রেগে আগুন তেলে–বেগুন। কিন্তু কারকারফ, বেগম্যানকে দেখে মনে হল একটু কম উত্তেজিত।

সকলের দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে ডাম্বলডোর বললেন-এখন আমাদের দেখতে হবে আমরা কেমন করে ওদের চাল ব্যর্থ করতে পারি।… এখন আমাদের চ্যাম্পিয়নদের কি করতে হবে না করতে হবে নির্দেশ দেওয়া দরকার–তাই না? বার্টি আপনি কী সেই সম্মান স্বীকার করবেন? মি. ক্রাউচকে দেখে মনে হল দারুণ এক ভাবাচ্ছন্নতা থেকে বেরিয়ে এসেছেন।

–নির্দেশ…! ও … প্রথম কাজের। ৰার্টি হ্যারিকে ও অন্যদের বললেন, প্রথম কাজ হচ্ছে তোমার সাহসের পরীক্ষা। সেই পরীক্ষা সম্বন্ধে তোমাদের কিছু আভাস দিতে চাই না। নিজের বিরুদ্ধে সাহসের লড়াই। একজন জাদুকরের এটাই হচ্ছে বিশেষ গুণ… ও খুবই প্রয়োজনীয়।

প্রথম কাজ হবে ২৪ নভেম্বর… উপস্থিত থাকবেন দর্শক, ছাত্র–ছাত্রী ও প্যানেলের বিচারকরা।… চ্যাম্পিয়নরা তাদের শিক্ষকদের কাছ থেকে কোনও রকম সাহায্য বা উপদেশ চাইতে পারবে না। প্রথম কাজে তারা শুধুমাত্র দুও ব্যবহার করতে পারবে… এইসব কারণের জন্য চ্যাম্পিয়নদের এই বছরের শেষ পরীক্ষা থেকে অব্যহতি দেওয়া হচ্ছে।

কথাগুলো বলে কাউচ ডাম্বলডোরের দিকে তাকালেন।

–ডাম্বলডোর এইটুকু যথেষ্ট, কি বলেন? ডাম্বলডোর কাউচের মুখের দিকে সামান্য চিন্তিত হয়ে তাকিয়ে ছিলেন। বললেন–ও হ্যাঁ অ্যালবাম মনে হয় ঠিক ব্যাখ্যা করেছেন।

বার্টি আজ কি আপনি হোগার্টে থেকে যাবেন না?

–দুঃখিত ডাম্বলডোর আমাকে মন্ত্রণালয়ে যেতে হবে, মি. ক্রাউচ বললেন এখন আমরা খুব ব্যস্ত শুধু নয়, খুবই একটা সঙ্কটের মধ্যে চলেছি। আমি ইয়ং ওয়েদারবাইকে সব দায়িত্ব দিয়ে এসেছি… ও খুব চালাক–চতুর সন্দেহ নেই একটু বেশি বলতে পারেন… সত্যি কথা বললাম।

–বেশ তাহলে সামান্য পানাহারে অংশ নিতে অবশ্যই আপত্তি নেই।

বেগম্যান বললেন–চলুন তাহলে বাটি

মাদাম ম্যাক্সিম ফ্লেউরের কাঁধে হাত রেখে ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে যেতে ফ্রেঞ্চ ভাষায় ওকে কিছু বলতে লাগলেন। হ্যারি কিছু বুঝতে পারলো না।… কারকারফও ক্রামকে বললেন। উভয়েই খুব উত্তেজিত মনে হল।

কারকারফ দারুণ চটে গেছে, মুডি ডাম্বলডোরকে সাপোর্ট করাতে। তাই মুডিকে হেয় করার জন্য বললেন–উনি মনে করেন সমস্ত সকাল ব্যর্থ হবে যদি না কম করে প্রতিদিন দুজন তাকে খুন করার চেষ্টা করছে এমন একটা আবহাওয়া না বানান। তাই ছাত্রদের শেখাচ্ছেন খুনের ভয়। অদ্ভুত ব্যাপার ডাম্বলডোর… যাই হোক আপনি যা বোঝেন তাই করন।

মুডি বললেন–কারকারফ ওইরকম শিক্ষা না দিলে ডার্ক আর্ট হামলা করলে বাধা দেবে কেমন করে।

ফয়সালা কিছু হল না। সকলেই এক এক করে ঘর ছেড়ে চলে গেলেন।

ডাম্বলডোর সেডরিক আর হ্যারিকে বললেন–অনেক রাত হল, এবার তোমরা শুতে যাও। আমি নিশ্চিত গ্রিফিন্ডর আর হাফলপাক তোমাদের সঙ্গে সেলিব্রেট করার জন্য আকুল হয়ে জেগে রয়েছে। ওদের বঞ্চিত করা কিন্তু খুব দুঃখজনক ব্যাপার হবে।

হ্যারি, সেডরিকের দিকে তাকাল। সেডরিক মাথা নাড়ল। তারপর ওরা ঘর থেকে চলে গেল।

গ্রেট হল তখন জনমানবশূন্য। মোমবাতিগুলো প্রায় শেষ হয়ে গেছে। সামান্য পোড়া পোড়া গন্ধ বেরোচ্ছে।

সেডরিক হেসে বলল–তাহলে? তাহলে আমরা দুজনে দুদলের হয়ে আবার খেলতে নামছি!

হ্যারি বলল–তাইতো মনে হয়।…অন্য কি কথা বলবে ও খুঁজে পায় না। মাথার মধ্যে সব ভাবনা–চিন্তা জট পাকিয়ে গেছে। যেন ওর মাথার ঘিলু তছনছ হয়ে গেছে।

ওরা তখন এনট্রেন্স হলে পৌঁছেছে। সেখানে সামান্য অন্ধকার গবলেট অব ফায়ার নেই, শুধু একটা মশাল জ্বলছে। সেডরিক বলল

–তো বল কেমন করে তুমি চান্স পেলে? কে তোমার নাম দিল?

-এতক্ষণ তাহলে তুমি শুনলে কী? আমি নাম দিইনি… এইটাই সম্পূর্ণ সত্যি কথা।

–আচ্ছা ঠিক আছে। আচ্ছা পরে দেখা হবে।… হ্যারির মনে হল সেডরিকও ওর কথা বিশ্বাস করেনি।

সেডরিক মার্বেল পাথরের সিঁড়ি ধরে ওপরে না গিয়ে ও ডান দিকে ঘুরল। হ্যারি দাঁড়িয়ে ওখান থেকে সেডরিকের নিচে নামার পায়ের শব্দ শুনতে পেল। তারপর ও একাই মার্বেল পাথরের সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতে থাকে।

রন আর হারমিওন ছাড়া কেউ কি ওর কথা বিশ্বাস করবে না? কেউ কেন ভাবছে না কোনওরকম অভিজ্ঞতা ছাড়া ও প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হচ্ছে যেখানে তার প্রতিপক্ষদের তিন–চার বছরের ম্যাজিক শিক্ষার অভিজ্ঞতা রয়েছে? এখন ওকে শত শত লোকের সামনে ম্যাজিক দেখাতে হবে… ব্যাপারটা মোটেই সহজ নয়। হাঁ, ইতোমধ্যে সে সম্বন্ধে ও গভীরভাবে ভেবেছে, ও নিয়মবিরুদ্ধ বাছাই হয়েছে, নিশ্চয়ই কোনও জোক, নয়ত স্বপ্ন…. যাই হোক না কেন কখনই ও প্রতিযোগিতায় একজন প্রতিযোগী হয়ে দাঁড়াবে এমন হাস্যকর ভাবনা ওর মাথায় আসেনি।

কিন্তু সে না হলেও অন্তরীক্ষ থেকে কেউ একজন অবশ্যই ভেবেছে ও টুর্নামেন্টে থাকুক-এবং তাকে অন্তর্ভুক্ত করেছে। কেন? ওকে শিক্ষা দেয়ার জন্য। সে কথা ও ভাবছে না, তবে…।

ওকে চ্যাম্পিয়ন বানাতে চাইছে। হয়ত সফল হবে তাদের মনের ইচ্ছা। তাহলে কি কারসাজি করে হত্যা করতে চাইছে। তাহলে কি মুডির স্বাভাবিক নৈরাশ্য চিন্তা? কেউ একজন মজা করার জন্য ওর নাম দেয়নি তো? কোনও একজন কী ওকে বেঁচে থাকতে দিতে চাইছে না?

ওর প্রশ্নের উত্তর ও পেয়ে গেল। হ্যাঁ কেউ একজন ছলাকলা করে ওকে হত্যা করতে চাইছে। কবে থেকে? ও জন্মাবার পর থেকেই।

..তাহলে কি ভোলডেমর্ট? কিন্তু লর্ড ভোলডেমর্ট কেমন করে নিশ্চিত হবে যে, ওর নাম গবলেট অব ফায়ারে দেওয়া হয়েছে। ভোলডেমর্ট তো শুনেছে বহুদূর এক দেশে আত্মগোপন করে আছে… একা, একেবারেই একা… দুর্বল শক্তিহীন। কিন্তু সেই বীভৎস স্বপ্ন দেখে কপালে কাটাদাগে অসম্ভব যন্ত্রণা–ব্যথা শুরু হয়েছিল। ভোলডেমর্ট তো একা ছিল না… ওকে ওয়ার্মটেলের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করতে শুনেছিল… হ্যারিকে হত্যা করার মতলবের কথা।

হঠাৎ সচকিত হয়ে গেল মোটা মহিলার সামনে নিজেকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে। কখন সেখানে এসেছে জানে না। আরও আশ্চর্য হয়ে গেল ফ্যাট লেডি ফ্রেমে একা নয়। সেই শীর্ণকায়া জাদুকরী যাকে ও ছোট ঘরটার একটা ফ্রেম থেকে অন্য ফ্রেমে যেতে দেখেছিল। হ্যারি দেখল দুজনেই ওর দিকে দারুণ কৌতূহলী দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে।

ফ্যাট লেডি বলল–ভাল, ভাল, ভাল, ভাওলেট আমাকে সবকিছু বলেছে… যে ছেলেটাকে স্কুল চ্যাম্পিয়ন হিসেবে গবলেট ফায়ার বাছাই করেছে। তাহলে?

হ্যারি ভাবলেশহীন চিত্তে বলল–পাগলের প্রলাপ। শীর্ণকায়া রেগে বলল অবশ্যই না, হতে পারে না।

ফ্যাট লেডি বলল, না না, যা হচ্ছে পাশওয়ার্ড। কথাটা বলে ফ্রেমের মধ্যে ঢুকে গেল। হ্যারিকে কমনরুমে যাবার রাস্তা করে দিল।

কোনও অদৃশ্য হাত, কম করে বার জোড়া হাত ওকে এক রকম ঠেলতে ঠেলতে কমনরুমে ঢুকিয়ে দিল। একেবারে গ্রিফিন্ডারদের সামনে পৌঁছল। বলতে গেলে সবাই–কেউ বাদ নেই সকলেই হই চই করে উঠল, সকলের প্রশংসা ও সিটি বাজাতে লাগল।

ফ্রেড বলল–তুমি যে এখানে আসছ সেটা আগেভাগে জানানো উচিত ছিল। ওর মুখ দেখে মনে হয় অর্ধেক বিরক্ত, অর্ধেক গভীরভাবে চিন্তিত।

জর্জ বেশ জোর দিয়ে বলল–তোমারতো দাঁড়িও গজায়নি তারপরও তুমি কি করে ম্যানেজ করলে?

–আসলে আমি কিছু করিনি, কীভাবে আমার নাম আসলো তার আমি কিছু জানি না।

অ্যাঞ্জেলিনা প্রায় ওর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে বলল, নিশ্চয়ই আমি করিনি, আমি গ্রিফরের।

কেটিবেল তীক্ষ্মভাবে বলল–ডিগরিকে কিডিচের হারের বদলা নিতে হবে তোমাকে হ্যারি।

–আমাদের কাছে অনেক খাবার। এস খাই।

–না, না, ফিস্টে অনেক খেয়েছি, আমার এখন ক্ষিধে নেই, হ্যারি বলল।

কিন্তু না বললে কি হবে? কেউ মানতে চায় না ওর ক্ষিধে নেই, যেমন সে গবলেটে নাম দেয়নি; এটাও কেউ ওর কথা মানতে চায় না। ওদের মনের অবস্থা বুঝতে পারে, এখন আর কিছুই ভাল লাগছে না।… সী জর্ডন কোথা থেকে একটা গ্রিফিন্ডারের ব্যানার এনে হ্যারির সর্বাঙ্গে আলখেল্লার মত জড়িয়ে দিল। হ্যারির কোথাও পালাবার পথ নেই। বন্ধুরা ওকে চেপে ধরে শুধু বাটার বিয়র নয় আরও অনেক কিছু ওর মুখে ঠেলে দিল। আলুভাজা, চিনেবাদাম… আরও অনেক কিছু।

বারবার ওর মুখে একই কথা, আমি কিছু নিজে থেকে করিনি, আমি কিছু জানি না।

যেখানেই যায়–ঘরের বাইরে সকলেই ওকে তাড়া করে, আসল রহস্য জানতে চায়। কোথায় নিশ্চিন্ত হয়ে থাকতে পারে না।

অবশেষে ও এক কোণে আশ্রয় নিয়ে বলল–জর্জ আমি বড় ক্লান্ত আমাকে তোমরা যুমুতে দাও।

ও চাইছিল–রন, হারমিওনকে। দুজনের একজনেরও ও দেখা পেলো না। চোখ–কান বন্ধ করে ডরমেটরির দিকে ছুটল।

ঘরে গিয়ে রনকে দেখতে পেয়ে ও স্বস্তি পেল, শান্ত হল। রন ওর বিছানায় শুয়েছিল। ড্রেস বদলায়নি। হ্যারি দড়াম করে দরজাটা বন্ধ করার সময় ও মুখ তুলল।

হ্যারি বলল, কোথায় ছিলে? তোমার তো দেখা নেই।

রন হেসে বলল–হ্যালো।

হ্যারি মন মেজাজ এত বেশি খারাপ ছিলো যে খেয়ালই করেনি লী ওর গায়ে যে ব্যানারটা দিয়েছিল সেটা তখনও গায়ে জাপটে রয়েছে। রন দেখল হ্যারি ব্যানারটা খোলার চেষ্টা করছে। শেষ পর্যন্ত ওটা খুলে ফেলে হ্যারি এক কোণে ছুঁড়ে ফেলে দিল।

–হ্যারি কনগ্রাচুলেসন্স!

–মানে কি বলতে চাইছ? কনগ্রাচুলেস? রন অদ্ভুতভাবে শ্লেষমাখা এমন এক ভঙ্গি করে হাসল দেখে হ্যারির একটুও ভাল লাগল না। হাসিটা মনে হল অনেকটা ভেংচিকাটার মত।

রন বলল–কেউ তো বয়সের লাইন পার হতে পারেনি, এমন কি ফ্রেড জর্জও। তুমি পারলে কেমন করে? অদৃশ্য হবার আলখেল্লা পরে?

হ্যারি রনকে দুঃখ দিতে চায় না। বন্ধু এবং ভাইয়ের মত। তাই খুব সংযত কণ্ঠে বলল–ওটা পরেও লাইন পার হওয়া সম্ভব নয়।

–ঠিক আছে, ঠিক আছে। ওটার কথা আগে বলতে পারতে, তাহলে আমরা দুজনেই তা পারতাম…। কিন্তু তুমি অন্য পথ নিলে, তাই না?

হ্যারি বলল–বিশ্বাস কর রন, আমি গবলেটে আমার নাম দিইনি। অন্য কেউ কিছু করেছে।

রন ভুরু কুঁচকে বলল–বা, অন্যের তোমার জন্য কি মাথা ব্যথা?

হ্যারি বলল–তা আমি জানি না… তবে বোধহয় আমাকে হত্যা করার জন্য এক ছক। কথাটা খুব নাটকীয় মনে হল।

রনের ভুরু আরও উপরে উঠে গেল। এত বেশি যে মাথার চুলে মিশে যাবে।

–যাকগে, সত্য কথাটা বললে আমি খুশি হব। তুমি আজ না বললেও, একদিন না একদিন সকলে রহস্যটা জানতে পারবে। কিন্তু হ্যারি এই সোজা কথাটা আমি কিছুতেই ধরতে পারছি না–কেন তুমি গোপন করছ, মিথ্যা বলছ। সত্যি কথাটা আমাকে বললে কোনও সমস্যা হবে না। মোটা মহিলার বান্ধবী ডায়লেট… আমাকে বিষয়টা বলেছেন। ডাম্বলডোর তোমাকে মনোনীত করেছেন। এক হাজার গ্যালিয়ন পুরস্কার! আর তোমাকে বছরের শেষে পরীক্ষায় বসতে হবে না।

হ্যারি জোর দিয়ে বলল–আমি আবারো বলছি গবলেটে আমি নাম দিইনি।… হ্যারির এবার রাগ চড়তে থাকে।

–আচ্ছা খুব সুখের কথা, এমনভাবে বলল যা কিছু আগে সেডরিককে হ্যারি বলেছিল।

–আজ সকালে নয়, এ কাজটি তুমি গতরাতে করেছ। তাই কারও চোখে পড়েনি। আমাকে তুমি যতোটা গদর্ভ মনে করো–আসলে তা নই।

হ্যারি বলল–তোমার কথায় কিন্তু তাই মনে হয়।

–তাই নাকি? রন বলল, ওর মুখে হাসি নেই।–যাও শুয়ে পড়। কাল সকালে তুমি একটি ফোটোকল অথবা ওই রকম একটা কিছু পেতে পার।

যে পর্দাটি দিয়ে বনের চারটে পোস্টার ঢাকা ছিল সেটা সে টেনে–খুলে ফেলল, হ্যারি দরজার গোড়ায় দাঁড়িয়ে। ওর দৃষ্টি লাল ভেলভেট পর্দার দিকে। ওর ধারণা এদের অন্তত একজন ওর কথা বিশ্বাস করবে।