Accessibility Tools

বইয়ের নাম - লেখক
ইতি নির্ভয়পুর – অর্পিতা সরকার
ইতি নির্ভয়পুর – অর্পিতা সরকার
0/37
ইতি নির্ভয়পুর – অর্পিতা সরকার

ইতি নির্ভয়পুর – ৩১

৩১

“আজ আমার বড়ো আনন্দের দিন শোভন। তুমি জানো শানুর ভালোবাসার মানুষ হয়েছে নির্ভয়পুরে? নূপুর মল্লিক পেশায় ডাক্তার। এই শোভন, এ তো আমাদের মতোই, কর্তা-গিন্নি দুজনেই ডাক্তারি করে জীবন কাটাবে।”

শোভন বলল, “তুমি কি জানো, তোমার বেয়াদব ছেলে অমন মিষ্টি মেয়েটার সঙ্গেও খারাপ ব্যবহার করে? মেয়েটা আমার পেশেন্ট অরুণাংশু মল্লিকের কন্যা। ভারি মিষ্টি মেয়ে। আরে, আমি তো তপনকে পাঠিয়েছিলাম শানুকে চব্বিশ ঘণ্টা ফলো করার জন্য। তো তপনই আমায় এসব খবর দিল।”

নিবেদিতা হেসে বলল, “মেয়েটি আমায় ফোন করে শানুর কী কী পছন্দ সে সব জিজ্ঞাসা করছিল। আমিও সব ইনফর্মেশন দিলাম।”

শোভন বলল, “বুঝলে, অরুণাংশু মানুষটি ভালো। ওঁর স্ত্রীও মন্দ নন। মুশকিল ওদের ছেলেটাকে নিয়ে। বোনের প্রতি তার মারাত্মক পজেসিভনেস। আমার চেম্বারে বসেই বলে ফেলেছিল, ‘ওই অনাথ, সম্বলহীন ডাক্তার হাসপাতালে চাকরি করছে করুক, আমার বোনকে আমি নির্ভয়পুরে কেরিয়ার শেষ করতে দেব না। সে নিজের বোনকে বিদেশে পাঠাবে, না কলকাতার কোনও ভালো নার্সিংহোমে প্র্যাকটিস করাবে সেটা তাদের ব্যাপার। কিন্তু শৌনকের সম্পর্কে ওর দাদার যে মনোভাব দেখলাম, তাতে ওদের সম্পর্কটা ওই সাহেব ভালো চোখে দেখে না। তপনের খবর অনুযায়ী, সাহেব নাকি বোনের সঙ্গে শানুর মেলামেশাও একেবারেই পছন্দ করে না। তবে নূপুর মেয়েটি অত্যন্ত স্বাধীনচেতা। নিজের সিদ্ধান্তে অটল থাকে।”

নিবেদিতা বলল, “দেখো তোমার ছেলের মাথাটা কিন্তু যথেষ্ট ফাস্ট চলে। তোমার ওই তপনকে যদি একবারও আইডেন্টিফাই করতে পারে, তা হলে যে সূক্ষ্ম আশাটা জন্মেছে, সেটাও যাবে। আমাদের সম্পর্কটা ঠিক হবার শেষ আশাটাও ধূলিসাৎ হয়ে হবে।”

ওদের কথার মাঝেই নিবেদিতার ফোনটা বেজে উঠল। স্ক্রিনে ফুটে উঠল, শানু।

শোভন বলল, “হঠাৎ ফোন? কিছু হল নাকি? শানু তো উপযাচিত হয়ে আমাদের ফোন করে না?”

নিবেদিতা বলল, “ধরব? আমার ভয় করছে।”

ফোনটা রিসিভ করতেই ওপারে নিস্তব্ধতা।

নিবেদিতা কাঁপা গলায় বলল, “কী রে শানু, কথা বলবি না বাবা?”

শৌনক শান্ত কঠিন গলায় বলল, “তোমার সঙ্গে নূপুরের আলাপ হয়েছে? অস্বীকার করবে না। আমার সব পছন্দের জিনিস জেনে যাওয়ার মতো ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আমাদের নয়। তাই আমি জানি, ওকে এই ইনফর্মেশনগুলো তুমিই দিয়েছ।”

নিবেদিতা উত্তেজিত না হয়েই বলল, “নূপুর নিজেই আমায় ফোন করেছিল। জানি না কোথা থেকে নম্বর পেয়েছে। জিজ্ঞাসা করেছিল, তোর পছন্দের জিনিস কী কী? আমি যেটুকু জানতাম, বলেছিলাম। তবে পছন্দ তো বদলায়। হয়তো তোরও পছন্দ বদলে গেছে। আর-একটা পছন্দ আমি অবশ্য ওকে বলিনি। কারণ সেটা এখন তোর অপছন্দের তালিকায় চলে গেছে।”

শৌনক বলল, “সেটা কী?”

নিবেদিতা বলল, “একসময় তোর সব থেকে পছন্দের জিনিস ছিল, মায়ের গায়ের গন্ধ, বাবাইয়ের মুখের হাসি। সে দুটো আমি নুপুরকে বলিনি। কারণ নির্ভয়পুরে তো তুই অনাথ বলেই পরিচয় দিয়েছিস শুনলাম। সে যা-ই হোক, তুই যদি মনে করে থাকিস, নূপুরকে এগুলো বলা অন্যায় হয়েছিল, তা হলে আর কোনও শাস্তি থাকলে দিয়ে দিস। তোকে পাঁচ বছর না দেখে থাকার শাস্তিটা তো সহ্য করেই চলেছি। এর সঙ্গে আর যদি কিছু থাকে যেটা তুই দিতে চাস, দিতে পারিস।”

শৌনক শান্ত গলায় বলল, “নুপুরের সঙ্গে কথা বলে তোমার ওকে কেমন লেগেছে? হোয়াটসঅ্যাপে একটা ছবি পাঠাচ্ছি, বাবাইকে দেখাও। বলো তোমাদের কী মত?”

নিবেদিতা কান্নাভেজা গলায় বলল, “যে তোকে ভালোবাসবে, তাকে আমরা ভালোবাসব।”

শৌনক বলল, “উহু, শুধু নুপুর আমায় ভালোবাসে বলল ভুল বলা হবে। আমিও ওকে ফিল করি প্রতিমুহূর্তে। তুমি বলেছিলে, ভালোবাসার অনুভূতি কাউকে বোঝানো যায় না। কেউ যখন ভালোবাসে, শুধু সে-ই অনুভব করে। আমি মনে হয় নুপুরকে ভালোবাসি। ওর উপস্থিতি আমায় আনন্দ দেয়। ওর অনুপস্থিতি কষ্ট দেয়।” নিবেদিতা কিছু বলার আগেই শৌনক বলল, “এখন রাখছি। কেউ একজন ডাকছে।”

ফোনটা হাতে ধরেই অঝোরে কেঁদে ফেলল নিবেদিতা।

শোভন কাঁধে হাত রেখে বলল, “কেঁদো না। অপমান করার জন্য ফোন করবে, এটাতে আর নতুনত্ব কী আছে? নূপুরের সঙ্গে কথা বলেছ বুঝতে পেরে অপমান করল তো?”

নিবেদিতা শোভনের বুকে মুখ গুঁজে বলল, “অপমান করেনি শানু। নূপুরের ছবি পাঠিয়ে তোমায় দেখাতে বলল। আমাদের মতামত জানতে চাইল ওর বিয়ের ব্যাপারে।”

শোভন থতমত খেয়ে বলল, “তোমায় কে ফোন করেছিল? শানু করেনি?”

নিবেদিতা বলল, “হ্যাঁ গো, আমাদের শানুই করেছিল। মনে মনে ও এখনও আমাদের সন্তান। আমাদের একমাত্র সন্তান। নূপুর আমাদের পছন্দ কি না জানতে চাইছে। তা হলে ও সম্পর্কে এগোবে।”

শোভন বিস্মিত হয়ে বলল, “বাবাকে দেখিও না কী বলেছে যেন? আর-একবার বলো।”

নিবেদিতা চোখের জল মুছতে মুছতেই বলল, “নূপুরের ছবিটা তোমায় দেখাতে বলল, বউমা পছন্দ হয় কি না দেখো।”

শোভন হেসে বলল, “মেয়েটার এলেম আছে তা হলে। এই ইগো-সৰ্বস্বকে জব্দ করেছে বলো?”

নিবেদিতা বলল, “আজ একবার নূপুরকে কল করব, তুমিও কথা বোলো তখন।”

শোভন হাসছে, বাবা ডাক প্রথম শোনার পরে যেমন হেসেছিল তেমন।