মৌর্য – ১০৯
১০৯
তৃতীয় দিনে হেলেনের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার চূড়ান্ত অনুষ্ঠান শুরু হবে শোভাযাত্রার (শবযাত্রা) মধ্য দিয়ে। একটি উন্মুক্ত শকটে হেলেনের মমিপ্রতিম মরদেহ রাখা হয়েছে। চারটি ঘোড়া তা টেনে নিয়ে যাবে। দিদাইমেইয়া কালো ঢোলাঢিলা একটি গাউন পরিধান করে বংশদণ্ড হাতে নিয়ে শকটের সামনে থেকে এ শোভাযাত্রায় নেতৃত্ব দেবেন। তার আগে তাঁকে একগুচ্ছ চুল, যাতে মধু, দুধ, জল, মদ, সুগন্ধি ও তৈলমিশ্রিত করে উৎসর্গ করতে হয়েছে। ফাওলিনের বাবা সে বস্তু সামনে নিয়ে প্রার্থনা করেছেন এবং মেগাস্থিনিস তাঁকে সহায়তা করেছেন। অতঃপর এঁরা, অর্থাৎ ফাওলিনের বাবা, কিউকেকাস, নিকোমেডেস, মেগাস্থিনিস, বিন্দুসার ও সম্রাট চন্দ্রগুপ্ত শকটের চারপাশে অবস্থান নিয়েছেন। দিদাইমেইয়ার ঠিক পেছনে দাঁড়িয়েছেন লাউডিস, স্ট্রেটোনিস, ফাওলিন ও হারমিজ। সবাই ঢোলা কালো বস্ত্র পরিহিত। তাঁদের পেছনে কালো বস্ত্র পরিহিত নিখিল, চীনা শিল্পী ও রাবণহাথার শিল্পী। তাদের পেছনে উৎসর্গের পণ্যবোঝাই চিত্রিত পটরাজি বয়ে নিয়ে যাচ্ছে কেউ কেউ। তাদের পেছনে মন্ত্রী, আচার্য, মহাপাত্র, অমাত্য, রাজকর্মচারী, প্রজাসাধারণ, অসংখ্য ও অগণিত। রাস্তার দুপাশে শান্তিরক্ষী ও সেনাসদস্যরা লম্বা সারিতে দাঁড়িয়ে আছে, হাতে তাদের নানা দেবাস্ত্র। দিদাইমেইয়ার বংশদণ্ডের ইঙ্গিতে শবযাত্রা শুরু হবে। শুরু হলো নিখিলদের বাঁশিতে স্তবগানের সুর। ঠিক এ সময় বহুদূর থেকে কালো বস্ত্র পরিহিত এক মধ্যবয়সী নারী চিৎকার করতে করতে ছুটে এলেন। বলছেন ভুল হয়ে গেছে। থামো তোমরা, থামো। কাছে আসতেই শান্তিরক্ষীরা আটকে ফেলেছে তাকে। জবরদস্তিতে ধস্তাধস্তি হচ্ছে। সম্রাটের চোখ গেল সেদিকে। তিনি দৃঢ় পায়ে এগিয়ে গেলেন। দেখে চিনতে কষ্ট হলো না, এ নারী রাক্ষসপত্নী সর্বাণী। গতকাল কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন।
সম্রাট বললেন, কী বলতে চাও তুমি?
আমার ঋণ শোধ করতে চাই।
কী ঋণ?
দেখাচ্ছি সম্রাট, বলে সঙ্গে আনা পুঁটলি থেকে বের করলেন স্বর্ণ, হীরা, মণিমুক্তার সব গয়না এবং মমিসদৃশ মরদেহে (কালো বস্ত্রে) একে একে গেঁথে দিতে লাগলেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই মরদেহ দৃষ্টিনন্দন হয়ে উঠল। অলংকার সজ্জিত দেহ রোদে ঝলমল করতে শুরু করল। কাজ শেষে সর্বাণী প্রজাদের কাতারে চলে এলেন, সম্রাট ফিরে গেলেন তাঁর পূর্বস্থানে। বিউগলের সুরে এবার শবযাত্রা আবার শুরু হলো।
নিখিলের বাঁশির করুণ সুর মহানীরবতার সঙ্গে জীবনের সর্বশেষ ঠিকানায় পৌঁছে দিল সম্রাজ্ঞী হেলেনকে। সেখানে প্রস্তুত ছিল সেনাবাহিনীর একটি চৌকস দল। সম্রাজ্ঞীকে এরা স্যালুটের মাধ্যমে শেষ বিদায় জানাল। এখানেই সম্রাট তাঁর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার ভাষণ দিলেন। বললেন, মৌর্য সাম্রাজ্যের অধিবাসীগণ শোনো, এক নারী, যাকে তোমরা যবন বলতে, তার শেষ বিদায় কত গৌরবজনক। তোমরা কত শোক নিয়ে তার শেষযাত্রায় অংশ গ্রহণ করেছ। মানুষের পরিচয় দেশ, বংশ, ধর্ম, বর্ণ কিংবা রাজকীয় কোনো খেতাব নয়, কর্মে। কর্ম দিয়ে সব কিছু জয় করতে হয়, এ শিক্ষাই দিয়ে গেছেন হেলেন।
এই হেলেন আমার মতোই এক দুঃখী সন্তান, মা যাকে ছেড়ে চলে গেছে। এই হেলেন আমার মতোই রাজার সন্তান কিন্তু রাজকীয় শৈশব, কৈশোর, যৌবন যাদের উপভোগের ছিল না, ছিল দুঃখ-কষ্ট আর গ্লানি বয়ে বেড়ানোর যন্ত্রণা। এই হেলেন যুদ্ধে পরাজিত বন্দী কোনো রাজনন্দিনী নয়, আমার ভালোবাসা, আমার আরাধনা, আমার প্রেম।
হেলেন, তুমি আমাদের সবাইকে ছেড়ে চলে গেছ দেবতা হেইডেস ও পার্সিফেনির সাম্রাজ্যে। এ এক গোপন দেশ, যেখান থেকে কেউ ফিরে এসে বলে না, সে কেমন আছে। আমাকে ছেড়ে গেছ যাও, কিন্তু বিন্দুসার, সে একজন মা পেয়েছিল, তাকে মাতৃশূন্য করলে। এই যে এত আয়োজন, আমি তার কিছুই করি নি, বিন্দুসার তার মায়ের জন্য করেছে। আমি শুধু তোমাকে ভালোবাসা দিতে জন্মেছিলাম, এত বড় সাম্রাজ্যের সম্রাট আমি অনেক কিছুই দিতে পারতাম, পাছে ভালোবাসা ছোট হয়, তাই এর প্রতিদ্বন্দ্বী কাউকে দাঁড় করাই নি বস্তুগত কিছু উৎসর্গ করে।
হেলেন, তুমি অভিমান করে আমাকে একা ফেলে চলে গেছ, আমি যুদ্ধযাত্রাকালে তোমার কথা মেনে বিন্দুসারের পরামর্শ গ্রহণ করি নি, এ জন্য? প্রমিলাকে ছেড়ে মেঘনাদ গেছেন, হেক্টরপত্নীকে ফেলে হেক্টর গেছেন। সবাই ফেরাতে চেয়েছিল, কিন্তু কেউ পারে নি। তোমাকে ও ফেরাতে পারব না জানি। আমিই যাব। সেদিন হয়তো দেবতা হেইডেস ও পার্সিফেনি আমাদের ভালোবাসায় ঈর্ষান্বিত হবে। জগতের মানুষ যখন তা জানবে, দেবতাদের আরও পরিহাস করবে। তুমি আর আমিই হব মানুষের ভালোবাসার শক্তি। ভালো থেকো তুমি। বিদায়। হেলেন বিদায়।
প্রশস্ত একটি কবরে শুইয়ে দেওয়া হলো হেলেনকে। উৎসর্গ করা বস্তুসমূহের পটগুলোকে একে একে সাজিয়ে বসিয়ে দেওয়া হলো চারপাশে। আগামেমননের মুখোশের মতো হেলেনের সম্রাজ্ঞী মুকুটটা শোভা পেল পেছনের দেয়ালটায়। স্টেলস শোটা রাখা হলো তার নিচেই। মরদেহ ঢেকে দেওয়ার কাজটা শুরু করতেই পাটালিপুত্রের নাগরিকদের মধ্য থেকে একজন এগিয়ে এসে বললেন, সম্রাট, অনুমতি দিন, আমাদেরও কিছু দেওয়ার আছে। এঁরা সোনাদানায় ভরিয়ে দিলেন হেলেনের সমাধি। এগুলো সম্রাজ্ঞীর প্রতি তাঁদের ভালোবাসার নিদর্শন হয়ে থাকল। তা দেখে দিদাইমেইয়া চোখ মুছলেন। তাঁর মনে প্রশ্ন, কর্নি এখানে এত জনপ্রিয়? মেগাস্থিনিস অবাক হয়ে ভাবলেন, এত কিছু দিতে পারে ভারতীয়রা। তাহলে কি শর্মিলা তাঁর সঙ্গে মিথ্যে অভিনয় করছে? তার হৃদয়েও ভালোবাসা আছে? মেঘনাদের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া থেকে ফিরে যাওয়ার দৃশ্যের বর্ণনা দিয়েছিলেন মাইকেল মধুসূদন দত্ত। বলেছিলেন, বিজয়া দশমীর দিনে দেবীকে বিসর্জন দিয়ে যেন ফিরে যাচ্ছে রাক্ষসেরা। হেলেনকে সমাধিস্থ করে যাওয়া চন্দ্রগুপ্তদের চেহারা দেখলে সে দৃশ্যই মনে পড়বে।
অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া থেকে ফিরে গিয়ে একটি কঠিন সিদ্ধান্ত নিলেন সম্রাট চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য। আচার্য ভদ্ৰবাহুকে আসতে অনুরোধ করলেন। আচার্য এলে বললেন, আচার্য, মনটা বড় বিধ্বস্ত, না হয় আমিই যেতাম আপনার কাছে, বলে থামলেন তিনি।
আচার্য ভাবলেন, তাঁকে হয়তো দাক্ষিণাত্যে না যেতে অনুরোধ করবেন সম্রাট। কিন্তু তাঁকে অবাক করে দিয়ে যা বললেন, তাতে তাঁর কানকে বিশ্বাস করতে পারলেন না ভদ্রবাহু!
আচার্য বললেন, এত বড় একটা সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আরও একটু ভেবে নাও, চন্দ্র।
চন্দ্রগুপ্ত বললেন, আমি ভেবেছি, আচার্য, ভেবেচিন্তেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আপনি এখনই এ কথা কাউকে বলার দরকার নেই। আমি আগে অসমাপ্ত কাজগুলো সমাপ্ত করব।
তারপরও তোমাকে ভাবতে বলব, চন্দ্র, বলে উঠে গেলেন আচার্য I
আচার্যের চলে যাওয়ার পর চন্দ্রগুপ্ত দুদিন কারও সঙ্গে দেখা দিলেন না, কথাও বললেন না। শুধু হেলেনের কথা ভাবলেন। কত স্মৃতি তাঁর। আনন্দ-বেদনার স্মৃতি। রাতে একটি স্বপ্ন দেখলেন। হেলেন একেবারে সাদা ধবধবে পোশাকে হাজির হয়েছেন। চন্দ্রগুপ্ত রাজকার্য করছিলেন। এসে চন্দ্রগুপ্তের আসনের হাতলে বসলেন। চন্দ্রগুপ্তের কাঁধে হাত রেখে বললেন, প্রজাদের জন্য এত কাজ করেন, সম্রাট!
তবু তো তোমার সমান জনপ্রিয় হতে পারলাম না।
ঈর্ষা হচ্ছে?
হওয়ারই তো কথা।
চলুন বারান্দায় যাই।
রাজপ্রাসাদের বারান্দা অনেক প্রশস্ত। স্বর্গীয় একটা অবস্থা যেন বিরাজ করছে। বারান্দায় যাওয়ার দরজায় বড় বড় পর্দাগুলো দুলছে। কেমন মায়াবী মায়াবী মনে হয়। বারান্দায় গিয়ে হেলেন বললেন, চলুন আকাশে উড়ি।
চন্দ্রগুপ্ত বললেন, আমাদের তো পাখা নেই, কীভাবে উড়ব?
এখানে উড়তে পাখার প্রয়োজন হয় না। আসুন, আসুন, আমার সঙ্গে আসুন, বলে হেলেন উড়ে গেলেন।
চন্দ্রগুপ্ত উড়তে গিয়ে ধপ করে মাটিতে পড়ে গেলেন। তাঁর ঘুম ভেঙে গেল। অন্য সময় হলে আচার্য ভদ্রবাহুর কাছ থেকে এ স্বপ্নের মর্ম জানতে চাইতেন। এখন তাঁর স্বপ্নের মর্ম সম্পর্কে কোনো আগ্রহ নেই। বিছানায় উঠে বসে মনে হলো এ স্বপ্নটা তিনি আরও কিছুক্ষণ দেখতে চেয়েছিলেন এবং না উড়তে চাইলে হয়তো আরও কিছুক্ষণ দেখা যেত। একটা নির্লিপ্ত মনোভাব তাঁর মধ্যে তৈরি হয়েছে। বিছানায় তিনি বসেই রইলেন।
.
বিন্দুসার, চাণক্য ও সুবন্ধু একত্রে বসে সাম্রাজ্যের বিষয়ে কথা বলছেন। সম্রাটের নির্লিপ্ততা এবং সাম্রাজ্যের কাজে সক্রিয়তার অভাবে কী ক্ষতি হচ্ছে, চাণক্য তা বুঝিয়ে বলছেন।
কৌটিল্য রাজার সব দুরাবস্থা সম্পর্কে উত্তরণের সব পথ বাতলেছেন, বিষণ্ণতা বা মানসিক বিপর্যয় ছাড়া। এটিও রাজার রাজ্য পরিচালনার জন্য বড় বাধা, বললেন বিন্দুসার।
চাণক্য ভেবে দেখলেন, কথাটা ঠিক। ব্যাপারটা তাঁর মনেই আসে নি। কিন্তু এ কম বয়সী যুবরাজের কাছে তিনি প্রথমেই হেরে যেতে চান না। বললেন, আছে যুবরাজ, একটু অন্যভাবে আছে। রাজার মন্ত্রণার (কাউন্সেলিং) কথা বলা আছে।
তা পর্যাপ্ত নয়, দৃঢ়ভাবেই বললেন যুবরাজ। যুবরাজের দৃঢ়তা দেখে সুবন্ধু হাসলেন।
চাণক্যের তাতে গোসসা উৎপন্ন হলো। প্রায় ধমকের সুরেই বললেন, হাসি থামাও মূর্খ। এ দুঃসময়েও তোমার মুখে হাসি। কোনো কাজ তোমাকে দিয়ে হয় না। যুবরাজ ছেলেমানুষ, তুমি সম্রাটকে সম্রাজ্ঞীর অসুস্থতার কথা জানাও নাই কেন? এর জন্য তোমাকেই মূল্য দিতে হবে।
যুবরাজ বললেন, আচার্য, কথাটা বেশি শক্ত হয়ে গেল না? এসব বলার কিংবা বিচার- বিশ্লেষণ করার অনেক সময় পড়ে আছে।
আমার মাথাটা ঠিক নেই, যুবরাজ, সাম্রাজ্যের এ সংকটের দিনে অস্থির হয়ে আছি।
তাঁদের অবাক করে দিয়ে সম্রাট দরবারকক্ষে উপস্থিত হলেন। তাঁকে মোটেও বিমর্ষ কিংবা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত মনে হচ্ছে না। তিনি অপরাপর অমাত্যদেরও ডাকলেন। যুবরাজ, মন্ত্রী, অমাত্য ও রাজন্যবর্গের উদ্দেশে বললেন, কয়েকটি আবশ্যকীয় কাজ আমাদের করতে হবে। নকশা অনুযায়ী সম্রাজ্ঞীর সমাধিসৌধ নির্মাণের কাজ শেষ করতে হবে। অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার পর গ্রিক রীতিতে একটি ভোজ দেওয়ার অনুশাসন রয়েছে। তার আগে দিদাইমেইয়ার সঙ্গে আলোচনা করে নেবেন। সেখানে যাতে মেগাস্থিনিসও থাকেন। সেলুসিয়ায় সম্রাটের বদল হয়েছে, নতুন সম্রাট সম্পর্ক রাখতে চাইলে এবং তা সম্মানজনক হলে তা বিবেচনা করতে হবে। মেগাস্থিনিস এখানে থেকে যেতে চাইলে তাকে আশ্রয় দিতে হবে। দুর্ভিক্ষের ব্যাপারে যুবরাজ যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে, তা যথাযথ ও পর্যাপ্ত। সব অধ্যক্ষ ও তত্ত্বাবধায়ককে এ ব্যাপারে সতর্ক করে দেওয়া হোক। অমাত্যগণ দুর্ভিক্ষকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেবে।
অন্ধ্রে মৌর্য শাসন জারি থাকবে, তবে সেখানকার প্রজাদের কোনো কর দিতে হবে না। ব্যবসায়িক কর হবে সামান্য। সেখানকার যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত প্রজাগণ কেন্দ্রীয় কোষাগার থেকে আর্থিক অনুদান লাভ করবে। অমরাবতীর ঐতিহ্য সংরক্ষণে রাজকোষ থেকে অর্থ বরাদ্দ করতে হবে। দুর্ভিক্ষ শেষ না হওয়া পর্যন্ত দুর্গত এলাকায় কোনো কর আদায় করা যাবে না। অন্যত্র নতুন কর ধার্য নিষিদ্ধ। সম্রাজ্ঞী বাৎসরিক সম্মানী বাবদ যে আটচল্লিশ হাজার পণ পেতেন, তা অব্যাহত থাকবে এবং এ অর্থ এখানে অবস্থানকারী তাঁর আত্মীয়স্বজন ভোগ করবেন। এঁরা পাটালিপুত্রে থাকতে চাইলে রাজকীয় সম্মানে থাকার বন্দোবস্ত করতে হবে। আমার অবর্তমানে যুবরাজের সাম্রাজ্য পরিচালনার সম্পূর্ণ এখতিয়ার থাকবে। সুবন্ধুকে সাম্রাজ্যের পূর্ণ মন্ত্রী করা হলো। সে যুবরাজের ব্যক্তিগত মন্ত্রক হিসেবেও কাজ করবে। মহামন্ত্রী আগের মতোই তাঁর দায়িত্ব পালন করবেন। আদেশগুলো লেখা ছিল। হাতের অঙ্গুরি দিয়ে সিলমোহর করে দিলেন এবং কাউকে কোনো প্রকার প্রশ্ন করার সুযোগ না দিয়েই সম্রাট নিজের কক্ষে চলে গেলেন।
চাণক্য স্তম্ভিত হয়ে বসে রইলেন। তাঁর অনেক কথাই বলার ছিল। অমরাবতীতে একজন মহা অমাত্যের প্রয়োজন। ভেবে রেখেছিলেন সুবন্ধুকে সেখানে পাঠিয়ে দেবেন। বলার ছিল মেগাস্থিনিসের এখানে আর কী প্রয়োজন। আচার্য ভদ্রবাহুকেই বা কেন দাক্ষিণাত্যে যেতে হবে। আর যা শুনলেন, তাতে নিজের কানকে বিশ্বাস হচ্ছে না, সম্রাটের অবর্তমানে যুবরাজ সাম্রাজ্য পরিচালনা করবে, তাহলে সম্রাট কোথায় যাচ্ছেন, কত দিনের জন্য যাচ্ছেন, নাকি প্রাসাদে স্বেচ্ছায় অন্তরীণ হয়ে থাকবেন। সুবন্ধুর নির্বাসনের পরিবর্তে পদোন্নতি হয়ে গেল। সম্রাট একটু জিজ্ঞেসও করলেন না। ভাবলেন, তাঁরও ভুল আছে। কেন পথে তিনি সম্রাটের সঙ্গে নাটক করতে গেলেন, অমরাবতী দখল কি খুব জরুরি ছিল? এতগুলো হত্যাকাণ্ড ঘটে গেল তাঁরই জন্য। নিজেই আবার তাঁর পক্ষে যুক্তি দাঁড় করালেন। তিনি ভুল কোনটি করেছেন? সম্রাটকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে এ বিশাল সাম্রাজ্যের প্রয়োজনেই। সেদিন নাটক না করলে অনাহারে সম্রাটের মৃত্যু হতে পারত। মৌর্য সাম্রাজ্যের বিস্তৃতি দক্ষিণে সমুদ্র পর্যন্ত হবে না কেন? এ সাম্রাজ্যের গৌরবের জন্য অমরাবতীর দখল অপরিহার্য ছিল। যুদ্ধে মানুষের মৃত্যু হবে, এ আর নতুন কী। সৈন্যদেরও তো অর্থকড়ির প্রয়োজন আছে, গ্রিকদের কাছ থেকে কাঁচকলাটাও পায় নি। যা করেছি, ঠিক করেছি। কিন্তু সম্রাট যাচ্ছেন কোথায়, কত দিনের জন্য যাচ্ছেন?
.
সুলভদ্র, বিশাখা, শর্মিলা এবং অপরাপর গুরুত্বপূর্ণ জৈন সন্ন্যাসীদের নিয়ে বসেছেন আচার্য ভদ্রবাহু। সুলভদ্র, থাকতে চাইছ, এখানেই থাকো, বললেন তিনি। সাম্রাজ্যের একটা কঠিন সময়ে আমরা পাটালিপুত্র ছেড়ে যাচ্ছি। স্থুলভদ্র, এখন তোমার দায়িত্ব অনেক। এখানে সম্রাটের ধর্মীয় পরামর্শদাতা থাকবে তুমি। ধর্মাচার্য হিসেবে যে আটচল্লিশ হাজার পণ আমি পাচ্ছি, এগুলো ধর্মের কাজে ব্যবহার করেছি। এগুলো ব্যক্তিগত, চাইলে তুমি নিজের জন্য ব্যয় করতে পারো। আমি শুনেছি তুমি শ্বেতাম্বর সম্প্রদায় সৃষ্টি করতে চাচ্ছ, এতে আমার আপত্তি নেই, তা তোমার ব্যাপার। বিশাখা এখানে থাকছে। সে দিগম্বর সম্প্রদায়ের হয়েই থাকবে বলে জানিয়েছে। এ বিভক্তিটা কোন পথে নিয়ে যাবে জৈনধর্মকে, তা বলা শক্ত। তা যা-ই হোক, তোমাদের সঙ্গে আমার আশীর্বাদ থাকবে।
বিশাখা বললেন, আচার্য, আমি আপনার পথই অনুসরণ করব। ঝড়-তুফান উপেক্ষা করেই করব। আপনার আদর্শের জন্য আমি জীবনও দিতে পারি।
বিশাখা, আবেগের কথাটা বলো না। আমরা যে ধর্ম পালন করি, তা যৌক্তিক ও বাস্তবসম্মত।
সুলভদ্র বললেন, আচার্য, শ্বেতাম্বরের ধারণা জৈন্যধর্মের মূল বিষয়গুলোকে প্রভাবিত করে না। ভারতীয় অন্য ধর্মগুলো এই ধারণাকে ধর্মসংস্কৃতির অন্তর্ভুক্ত করে নিয়েছে। মূল জৈনধর্মের কিছুই পরিবর্তিত হচ্ছে না।
আমি তো বলেছি, সে স্বাধীনতা ধর্ম তোমাকে দিয়েছে। পালন কিংবা পালন না করা যার যার অভিরুচি। শর্মিলা আমার সঙ্গেই যাচ্ছে।
.
দিদাইমেইয়ারা সবাই বসেছেন। গ্রিক রীতির অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার প্রতিপালনে এঁরা সম্রাট ও যুবরাজের ওপর খুবই সন্তুষ্ট। লাউডিস বললেন, সবকিছু সুন্দর মতো হয়েছে। কর্নির ভাগ্যই বলতে হবে। এই ভারতবর্ষে সে এত বড় সম্মান পেল, ভাবা যায়? মাঝখানে শুধু সর্বাণী সমস্যা করল, সে তো আগে বা পরেও তা করতে পারত। আর কেনই-বা করল? দিদাইমেইয়া বললেন, আমি ঘটনা জানি এবং তিনি সে ঘটনা বর্ণনা করলেন। পরে বললেন, হেলেন তাকে যথাযথ মর্যাদা দিতে সম্রাটকে অনুরোধ করেছিল। কারাগারে সে শান্তি ও নিরাপদে ছিল, না হয় তার জীবন বিপন্ন হতে পারত। তার কৃতজ্ঞতাবোধ এবং ঋণ পরিশোধের ধরনের প্রশংসাই করতে হয়। আর শুধু সর্বাণী কেন, সব প্রজাসাধারণের কথা ভাবো, কী উৎসর্গ করে নি এরা। এতে শুধু হেলেন নয়, আমরাও সম্মানিত হয়েছি।
কিউকেকাস বললেন, আমিও সম্মানিতবোধ করছি। তবে এ সম্মান নিয়ে আমি গ্রিসে চলে যাওয়ার পক্ষপাতী। কিন্তু পিসি, নিকো, ফাওলিনরা কি আমাদের সঙ্গে যাবে, বললেন লাউডিস। কেন যাবেন না? আমি তো তোমাদের সবার দায়িত্ব নিতে চাই।
এ সময় যুবরাজ এসে উপস্থিত হলেন। সবাই উঠে তাঁকে স্বাগত জানালেন। দিদাইমেইয়া বললেন, আমরা খুবই সন্তুষ্ট বিন্দুসার, তোমার এত বড় আয়োজনে।
ধন্যবাদ আপনাদের।
ধন্যবাদ তো তোমাকে দিতে হবে।
আপনারা কিছু বলছিলেন, আমি এসে বিঘ্ন সৃষ্টি করি নি তো?
না না, আপনি আসাতে ভালো হয়েছে, বললেন ফাওলিনের বাবা। আমরা এখন গ্রিসে যাওয়ার কথা ভাবছি।
আপনারা গ্রিসে যেতেই পারেন। তবে সম্রাট একটা আদেশ জারি করেছেন, আপনারা এখানে সসম্মানে বসবাস করতে পারবেন। সে জন্য চল্লিশ হাজার পণ প্রতিবছর আপনাদের প্রদান করা হবে। এটা দান বা অনুদান নয়, মা সম্মানী হিসেবে এ টাকাটা পেতেন। এখানে আপনারা রাজকীয় মর্যাদায় থাকবেন।
দিদাইমেইয়া বললেন, এ নিয়ে তো আমাদের ভাবতে হবে, যুবরাজ।
অবশ্যই, ভেবেচিন্তেই আপনারা সিদ্ধান্ত নেবেন। আরেকটা কথা, গ্রিক রীতিমতে একটা ভোজের আয়োজন করা হয়েছে। তাতে আপনাদের অংশগ্রহণ করতে হবে, সম্রাটের এ ইচ্ছে।
দিদাইমেইয়া বললেন, অবশ্যই।
যুবরাজ চলে গেলে নিকোমেডেস বলল, যুবরাজ খুবই আন্তরিক, মা। আমাদের ঝট করে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হবে না। সবাই তাকে সমর্থন করলেন। ফাওলিনের ছেলে বলল, আমিও সমর্থন করলাম। তার কথা শুনে এদের আসার পর এই প্রথম হাসলেন সবাই।
.
পরদিন সকালে মেগাস্থিনিসের কাছে যেন উড়ে গেলেন শর্মিলা। মেগাস্থিনিস বললেন, কিছুই বুঝতে পারছি না, আচার্য কি সত্যিই চলে যাচ্ছেন?
যাওয়াই চূড়ান্ত হয়ে গেছে।
মেগাস্থিনিস একটু চুপ করে থেকে বললেন, বেশ, তবে চলে যান। এখানে কাউকে রেখে যান, যাতে আপনার মতো আমাকে দেখা হলেই বকাবকি করতে পারে। তাতেও আমি আপনার কথা মনে করে শান্তি পাব। ভারতীয়দের নাকি হৃদয় আছে। হেলেন বলেছিলেন। মিথ্যে বলেছিলেন। ওই যে পাহাড়গুলো দেখছেন, এগুলোর ভেতরে শুধুই পাথর।
শর্মিলা পাহাড়ের ঝরনার মতো কাঁদছেন। পাথর যেন গলে গেছে।
আপনার কাছে তো কিছুই চাই নি। শুধু ভালোবাসা চেয়েছিলাম, আবার বললেন মেগাস্থিনিস।
পান নি?
মেগাস্থিনিস কিছু বলছেন না। নীরবে চোখ মুচ্ছেন। পরে বললেন, প্রথমেই আপনি আমার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন নি কেন? বলেন নি কেন, এ্যাই, গ্রিক দুরাচার, তোমাকে আমি ঘৃণা করি। চেষ্টা করেছি, পারি নি। যেটুকু করেছি, তার জন্য হৃদয় ছিঁড়ে গেছে। বুক ফেটে গেছে। আমরা যেদিন যাব, আপনাকে যেন সেদিন না দেখি, তাহলে আমি যেতে পারব না।
আচ্ছা, তাই হবে। সেদিন তো বলেছিলে যেন যাত্রাপথে থাকি।
বলেছিলাম। আজ মনে হয় ঠিক বলি নি।
ঠিক যে কোনটা, আমিও জানি না।
তাহলে আমি আসি।
বিদায় জানাতে বলছ, তা আমি পারব না। তবু হাত নাড়লেন মেগাস্থিনিস।
আমিও না, জবাবে বললেন শর্মিলা।
অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার ভোজ সম্পন্ন হয়ে গেল। সে এক মহাভোজ। পাটালিপুত্রের কেউ বাদ যায় নি। সম্রাট নিজে উপস্থিত থেকে, ঘুরেফিরে তত্ত্বতালাশ করে সবার খাওয়া নিশ্চিত করেছেন। ধর্মবর্ণ ও শ্রেণিমতো সবার জন্য আয়োজন করা হয়েছে। গ্রিক রীতি-ঐতিহ্যের পাশাপাশি আরেকটা জিনিস কাজ করেছে, তা হলো সম্রাটের সব ছেড়েছুড়ে চলে যাওয়ার মানসিকতা। অন্যেরা তা না জানলেও সম্রাটের ভেতর তা কাজ করেছে। ভোজ শেষে সম্রাট বললেন, কাল সকালে সভা বসবে। যুবরাজ, আধ্যাত্মিক গুরু, মহামন্ত্রী, মন্ত্রী, অমাত্যগণ এবং রাজন্যবর্গ তাতে উপস্থিত থাকবে, কথা আছে।
সবাই ভাবলেন সম্রাট আবার কী কথা বলবেন যে দরবার ডাকতে হবে। এঁরা চলে যাচ্ছিলেন। সম্রাট সুবন্ধুকে ডাকলেন, একান্তে বললেন, যুবরাজকে কাল রাজপোশাকে নিয়ে আসবে। দেখতে যাতে সুন্দর মনে হয়। রাজপোশাকে তাকে কেমন দেখায়, দেখতে ইচ্ছে করছে।
সারা রাত বড় অস্থিরতায় কাটল চন্দ্রগুপ্তের। ঘুম হলো না। এত বছরের সাম্রাজ্য, সম্রাটের প্রাসাদ ছেড়ে যাবেন ভাবতেই যেন কেমন লাগছে। কত স্মৃতি। কিছুই নেবেন না। এমনকি রাজকীয় বস্ত্র, পাদুকাও নয়। ছেলে, অর্থাৎ আগামীকালের সম্রাটের জন্য সবকিছু গোছগাছ করছেন, যাতে ওর কোনো অসুবিধা না হয়। ছেলের জন্য চিন্তা হয়। কী করবে ও। কত বড় একটা সমস্যা সামনে। মহামন্ত্রীটা ধূর্ত। কখন কী করে বসে কে জানে। তবু বিন্দুসারের ওপর ভরসা আছে। হেলেন যদি বেঁচে থাকতেন, তাহলে তাঁর হাতে বিন্দুসারকে তুলে দিয়ে নিশ্চিন্তে যেতে পারতেন। একটা দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে গেল হেলেনের কথা মনে হতেই। সম্রাজ্ঞী দুরধরার কথাও মনে পড়ে গেল। এ কক্ষেই আহার্য গ্রহণের পর বিষক্রিয়ায় তাঁর মৃত্যু হয়েছিল। এ জীবনে কত কিছু তাঁকে হারাতে হয়েছে। কাল হারাতে হবে ছেলেকেও। আর তো দেখা হবে না। ভাবতেই মনটা কেমন যেন হাহাকার করে উঠল
ভাবছেন চাণক্যও। কী হতে যাচ্ছে কাল। এ সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার প্রথম থেকেই আছেন। আছেন কী, তিলে তিলে গড়েছেন এ সাম্রাজ্যকে। সব সময়ই কী করতে হবে, তা তিনি সম্রাটকে পরামর্শ দিয়েছেন। সম্রাট সেইমতো কাজ করেছেন। অথচ এখন কী হচ্ছে, না হচ্ছে, তাঁকে আগে কিছুই জানানো হচ্ছে না। তেমন কিছু দেখার আগে তাঁর পদত্যাগ করাই উচিত ছিল। তিনি হাঁটছেন। পায়চারি করছেন উদ্ভ্রান্তের মতো। অনিদ্রার কারণে কি না কে জানে, হঠাৎই বরাহ মিহিরকে দেখলেন সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। আঁতকে উঠলেন তিনি। বললেন, মিহির, কাছে আসবে না, একদম না।
বরাহ মিহির দাঁড়িয়ে থেকে হাসল। বলল, আচার্য, আপনি ন্যায়বিচারক না, ঈশ্বর ঠিকই বিচার করেছেন, কাল জানবেন।
কী জানব?
কালই জানুন। এখন আসুন বুকের সঙ্গে বুক মেলাই, বলে হাসছিল সে। চাণক্য দুই পা পিছিয়ে গেলেন। বললেন, কাছে আসবে না, একদম না।
মিহির ক্রূর হাসি হেসে কোথায় যেন মিলিয়ে গেল।
চাণক্য আর স্বস্তি পাচ্ছেন না। তাঁর বিশ্বাস, মিহিরের প্রেতাত্মা ঘরের মধ্যেই কোথাও আছে। কিন্তু তিনি এতটা ভয় পেয়ে গেছেন যে ডাকতে কিংবা খুঁজতে সাহস পাচ্ছেন না।
সম্রাট নিজের কক্ষ থেকে বের হয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়েছেন। হেলেন ঠিক যেখানটায় তাঁকে নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। দূরে হেলেনের সমাধিটা দেখা যায়। প্রজ্বলিত আলোয় স্পষ্ট সেখানে দেখা যাচ্ছে কয়েকজন প্রহরী সমাধিটা প্রহরা দিচ্ছে। সেখানে অনেক মূল্যবান জিনিস আছে। সেসব চুরি হয়ে যেতে পারে, তাই প্রহরা। সৌধ নির্মাণ হয়ে গেলে প্রহরার আর প্রয়োজন হবে না। কী অদ্ভুত! হেলেন একা একা সেখানে শুয়ে আছে। তার সমাধি ছেড়ে যাচ্ছেন সম্রাট। ভেবে বড় কষ্ট হচ্ছে। আকাশটা পরিষ্কার। অনেক তারা ঝলমল করছে। হেলেন কি তারাদের সঙ্গে আছে? যদি থাকে তো ভালো হয়। সমাধি যাবে না, তারারা সঙ্গে সঙ্গে যাবে। যত দূরেই যাওয়া হোক না কেন, মনে হবে আকাশ, চন্দ্র, সূর্য, তারা সঙ্গেই আছে—ওই দেখা যাচ্ছে।
সম্রাট হঠাৎ করে ডাক শুনতে পেলেন। কে যেন তাকে নাম ধরে ডাকছেন, চন্দ্র। কারও উপস্থিতি তিনি টের পাচ্ছেন, কিন্তু দেখতে পাচ্ছেন না। বললেন, কে কে? কে যেন লাফিয়ে বলল, কোথায় যাচ্ছেন আমাদের ফেলে?
সম্রাট সাহসী মানুষ। ভাবলেন, হেলেনের আত্মা এসেছে। জৈনধর্মে আত্মারা অমর, এক দেহ থেকে অন্য দেহে যাতায়াতের শক্তি আছে তাদের। তিনি তা বিশ্বাস করেন। বললেন, হেলেন, তুমি এসেছ?
মিহিরের আত্মা বের হয়ে এল। বলল, হেলেন না, সম্রাট, আমি মিহির।
কী করছ এখানে তুমি?
কিছু না। দেখতে এসেছি, আপনার প্রস্তুতি।
দেখা শেষ হলে চলে যেতে পারো।
আমি আছি, আমি যাব না। আপনি আর ভদ্ৰবাহু যাবেন!
ভদ্রবাহু গেলেও তুমি শ্রুতিকেবলী হবে না। সে দায়িত্ব পাবে সুলভদ্র।
তাকেও আমি অন্যত্র পাঠাব। যাচ্ছি। হে! হে! হে! শেষ পর্যন্ত যেতেই হলো তাকে।