লুব্ধক – ২
২
ধারালো চাঁদ ঝলসায় রাতের গলায়
প্ল্যানেটোরিয়ামের ইলেকট্রনিক ঘড়িতে
তখন দারুণ জ্বর
অন্ধকার ফাঁকা ময়দানে
একটা ট্রাম টাল খায়
আচমকা চলে গেল পুলিশভ্যান
ঘুমন্ত কুকুরগুলোকে চমকে দিয়ে
রোজ চমকে দেয়৷
প্রথমেই উঠবে একেবারেই যা অলৌকিক নয় সেই কান গজিয়ে ওঠার ঘটনাটি৷ কলকাতা যতই মৃত চাকর-বাকর সমেত হৃষ্টপুষ্ট ও সেলফোনবাহী নিত্য যোগাযোগের মমি ও বেলুনদের শহর হয়ে উঠছে ততই এ ধরনের অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটার সম্ভাবনাও বাড়ছে৷ চারটি চাকার শূন্যের অর্থাৎ ০০০০-র ওপরে দাঁড়িয়ে রয়েছে একটি ঝকঝকে মোটরগাড়ি যার ভেতরে মৃত মুখে প্রসাধন ও কলপ গলে গলে গড়িয়ে পড়ছে৷ অন্যদিকে ছেঁড়া ও তাপ্পি লাগানো ঘুড়ি যেমন বাতিল হয়ে গেলেও তারে আটকে কঙ্কালের মতো মরা-হাত নাড়ে তেমনই বেঘর বেপাত্তা হয়ে রয়ে গেছে সেই রোগা-প্যাঁটকা বা অপুষ্টিতে ফুলে যাওয়া পার্ট-নাম্বার, সিরিয়াল-নাম্বার, রেশন কার্ড, হাসপাতাল থেকে দেওয়া নোংরা চিরকুট, বেফয়দা দস্তাবেজ ও দমকা ঝড়ের লাঠিচার্জে এদিক-ওদিক ছুটতে থাকা পলিব্যাগ ও মুড়ির ঠোঙারা, কাদা-মাখা পালক ও হ্যান্ডবিল৷ এসব অগুনতির কোনো হিসেব নেই৷
এই কুকুরটার রঙ কালো, যদিও তার সামনের বাঁ-দিকের থাবাতে কিছুটা জায়গা সাদা লোমে ঢাকা ছিল৷ ওর নাম দেওয়া যাক কান-গজানো৷ কেন এই নাম সেটা একটু পরেই জানা যাবে৷ কান-গজানো কোনো সাহসী কুকুর ছিল না৷ নেহাতই ভীতু স্বভাবের একটি মেয়ে-কুকুর যার একবার পাঁচটা জ্যান্ত আর একটা মরা বাচ্চা হয়েছিল৷ দুটো বাচ্চা চুরি হয়েছিল৷ সে দুটো তো মরেনি! দুটো গাড়ি চাপা পড়ে৷ একটাকে ছোটো থাকতেই শকুন ছোঁ মেরে নিয়ে যায়৷ এর ফলে একটা আস্ত শীতকাল কান-গজানোর কান্না থামেনি৷ গোড়ার দিকে কান্নাটা বিঁধতে না পারলেও ভেসে বেড়াত৷ পরে সয়ে যাওয়ার ফলে আলাদা করে আর চেনা যেত না৷ আক্ষরিক অর্থে ‘সন অফ আ বিচ্’ বলে একটাও থাকল না৷ অন্তত সে-বার৷ এদিকে প্রত্যেকটা স্তন দুধে ফেটে পড়ছে৷ কিন্তু সবই সয়ে যায়৷
কুকুররা কতদিন তাদের মৃতদের স্মরণে রাখে বা রাখতে পারে এ নিয়ে হয়তো-বা কোনো গবেষণা হয়েছে৷ না-হওয়াটাই বরং অসম্ভব৷ যাই হোক, সেই কালো, কাফ্রি কুকুর-মা একটা একতলার ফ্ল্যাটের গ্রিলের বাইরে একদিন খাবারের গন্ধ পেয়ে অথচ খাবার খুঁজে না পেয়ে ঘাস সরিয়ে সরিয়ে সন্ধান করছিল৷ ঘাসে যে ছোট্ট ছাই ছাই রঙের প্রজাপতিরা থাকে তারা পালাল৷ উড়ে গেল পিঠের ওপরে দুই ডানা জোড়া রোগা পরীর মতো কাঠি-ফড়িং৷ উড়ে গেল গঙ্গা ফড়িঙের বাচ্চারা যারা জন্মেই হাইজাম্প প্র্যাকটিস শুরু করে৷ গন্ধটা রয়েছে কিন্তু খাবারটা নেই কেন-এই ব্যাপারটা নিয়ে কুকুর-মা যখন তন্ময়, তখন গ্রিলের ফাঁক দিয়ে তার মাথার ওপরে মিউরিয়েটিক অ্যাসিড ঢেলে দেওয়া হয়৷ সহসা ঝাঁকুনি দিয়ে পিছু হটেছিল বলে অ্যাসিডটা থেকে ফ্যাঁস ফ্যাঁস করে রাগী ধোঁয়া বেরোচ্ছে, লোমের ওপর পিছল খেয়ে একটা কানের দিকে গড়িয়ে গিয়েছিল৷ এবং কানটা গোড়ার দিক থেকে গলে যেতে থাকে৷
চিল-চিত্কার করতে করতে ছুটতে থাকা অ্যাসিড-আক্রান্ত কুক্কুরীটি তখন একদিকে মাথা হেলিয়ে ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে দৈবক্রমে একটি জল-জমা কাদা-জায়গা দেখতে পায় এবং সেখানে গলে যেতে থাকা কানটি কাত হয়ে শুয়ে ডুবিয়ে দেয়৷ সেই পচা কাদাজলের মধ্যে পৃথিবীর প্রাণশক্তি ছিল৷ সিক্ত, শীতল আরাম ছিল৷ অবশ করে দেওয়ার কুহক-মন্ত্র ছিল৷ ঘাস ও নানাবিধ উদ্ভিদের ওষুধ ছিল৷ সর্বোপরি আশ্রয় দেওয়ার একটি কোল ছিল৷ বস্তুত এমন জায়গাতেই কাদাজল জমে যেখানে ভূপৃষ্ঠ কিয়দংশে অবতল৷ ঘেউ! ঘেউ!
এরপর লোম-ওঠা, কান-গলা, খোবলানো জায়গাটা দেখতে এমনই হয়ে উঠেছিল যে তার প্রতি যে-পুরুষ-কুকুরদের টান, তারাও তাকে এড়িয়ে চলত৷ কিন্তু নানা মাত্রার প্রাণের অন্তর্বিষ্ট ক্ষমতা এক জাদু-বাস্তব৷ লোম ক্রমে ঢেকে ফেলল জায়গাটা৷ তারপর যেমন গাছের ফেকড়ি বেরোয়, তেমনই উঁচু হয়ে উঠল৷ এবং বর্ষার জলে কেমন করুণা রয়েছে যে ধীরে ধীরে অন্যটার চেয়ে একটু ছোটো মাপের হলেও, মানানসই গোছের একটা কানও গজাল৷ এই জন্যেই তার নাম কান-গজানো৷ ওর সঙ্গে পরে আবার দেখা হবে৷
কুকুরদের বিরুদ্ধে পর পর যে-ঘটনাগুলো কয়েক দিনের ফারাকে ঘটেছিল সেগুলো স্বল্পপরিসরে জানবার আগে এটাও মনে রাখা দরকার যে, সব ঘটনার পরিণতি কান-গজানোর মতো আনন্দের নয়৷ ঘটনার ওপরে কুকুর-উপকথার মতো আলটু-ফালটু জিনিস যারা লেখে তাদের কোনো হাত থাকে না৷ যারা এসব ছাই-পাঁশ পড়ে তাদের বরং থাকলেও থাকতে পারে৷
দ্বিতীয় ঘটনাটা নির্দিষ্ট একটি জায়গায় ঘটেছিল৷ যাদবপুর থানা থেকে আনোয়ার শাহ রোড ধরে কেউ যদি লেক গার্ডেন্স বা নবীনা সিনেমার দিকে যায় তাহলে ঠিক একটা স্টপের মাথায় ডানদিকে একফালি মাঠ পড়ে যার পেছনে হল ই.ই.ডি.এফ.৷ এই মাঠে বেশ বড়ো একটা পুজো হয়৷ খেলাও হয়, ভালো ম্যাচ-ট্যাচ থাকলে রাস্তায় বেশ ভিড়ও জমে যায়৷ এই মাঠের উলটোদিকের ফুটে যে চায়ের দোকান আছে সেখানে সাদাটে থাকত৷ সাদা হয়তো আগে ছিল কিস্তু তখন চোখে পড়েনি৷ চোখে যখন পড়ল তখন অনেক কিছু ঘটে গেছে৷
দুপুরবেলা৷ চড়া রোদ্দুরে পিচ নরম৷ এতে থাবা না-আটকে গেলেও নখের ছাপ পড়বে৷ সিমেন্ট জমে যাওয়ার পরে এরকম ছাপও অনেক সময় থেকে যায়৷ খেয়াল রাখলে চোখে পড়বেই৷ সেই রোদ্দুরের তাতে ঝলসাতে ঝলসাতে সাদা একটা অ্যাম্বাসাডার, ডবিলউ. বি ওয়াই নম্বরের, কম করে ষাট কিলোমিটার গতিতে আসছিল এবং সাদাটে তখন রাস্তা পেরোচ্ছিল৷ সাদাটে ছিল রোগা, হাড়-জিরজিরে, নিরীহ ও রাম ভীতু৷ গরমে মাথা গুলিয়ে যায়৷ সাদাটেরও বোধহয় সে-রকম কিছু হয়ে থাকবে৷ তা না হলে সে প্রায়-শব্দহীন ও আগুয়ান গাড়িটাকে লক্ষ করেনি কেন, যার মধ্যে বাজনা বাজছিল কিন্তু চালক বাদে কেউ ছিল না৷
স্টিয়ারিংটা বাঁদিকে সামান্য একটু কাটালে এটা হত না৷ এমনও নয় যে বাঁ-দিকে কোনো গর্ত বা গাড়ি বা সাইকেল কিছু ছিল৷ একটা ছোট্ট মোচড় যদি স্টিয়ারিং-এ পড়ত তাহলে গাড়িটার সামনের ডানদিকের বাম্পার থেকে সাদাটের মাথার দূরত্বটা ফুট দেড়েক বেড়ে যেত৷ এবং সামনে দিয়ে দুধ-সাদা চকচকে হলকাটা চলে যাওয়ার পরে সাদাটে হয়তো বুঝতে পারত যে কী হতে গিয়েও হল না৷ কিন্তু সাদাটে যে ডানদিক থেকে রাস্তা পেরিয়ে আসছে সেটা তো অনেক দূর থেকেই দেখতে পাওয়ার কথা৷ সাদাটে যে গতিতে আসছিল সেটা মোটেই দ্রুত নয়, অতএব বেশ কিছুটা সময় ধরেই তাকে দেখতে পাওয়ার কথা৷
গাড়িটার ওজন ও গতি গুণ করলে যা হয়, তার সঙ্গে সাদাটের ভীতু ও সর্বদাই নীচু মাথাটির ধাক্কা খাওয়ার শব্দটি, দুষ্টু বুটের চাপে ফাঁকা ফ্রুটির বাক্স ফাটার মতোই৷ গাড়িটা এত জোরে চলে যায় যে, অত সুন্দর মোমপালিশ করা গায়ে ঘিলু বা রক্ত ছিটকে লাগল কি লাগল না বুঝেই ওঠা গেল না৷ উঁচু, বাঁধানো রোড-ডিভাইডারের ওপারে ছিটকে গিয়েছিল সাদাটের দেহ৷ মাথাটা ছত্রখান৷ পেছনের পা দুটো কয়েকবার টান টান হল, গুটিয়ে গেল, আবার টান হয়ে কয়েকবার থেমে থেমে কাঁপতে কাঁপতে চুপচাপ হয়ে যাওয়ার, নিঃসাড় হয়ে যাওয়ার দিকে এগোয়৷ গাড়িটা দয়া করে একটু যদি বাঁদিকে কাটানো যেত, স্টিয়ারিংটা বাঁ-হাত দিয়ে একটু আলতো, প্রায় না-ঘোরার মতো বাঁ-দিকে যদি সামান্যতম ঘুরত – কিন্তু এটাও তো হতে পারে যে, সাদাটেকে লক্ষ করা হয়েছিল এবং সেইমতোই গাড়িটা চালানো হয়েছিল যে, ঠিক সময়ে ঠিক ব্যাপারটা ঘটে৷ এখানে কাকতালীয় কিছুই হয়নি, সবটাই স্পষ্ট, কাকজ্যোত্স্নার মতো ম্লান বোধহয় নয়৷ গাড়িটা হয়তো তার ওপরে যে লঘুদায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল তাই বাধ্য যন্ত্রের মতো পালন করেছে৷ ট্রিগার টানার সঙ্গে সঙ্গে বন্দুক যেমন তার কাজ করে বা বিমান থেকে বোতাম টিপলে বোমা৷
তিন নম্বর ঘটনাটা ঘটেছিল উত্তর কলকাতায়৷ পাঁচমাথার মোড়ের কাছেই৷ ওখানে পাটকিলে একটা মায়ের চারটে বাচ্চা বেশ ভালোভাবেই বড় হচ্ছিল৷ দশদিনের পর যথারীতি চোখও ফুটেছিল৷ কলকাতায় তখন কলকাতার আন্দাজে বেশ শীত৷ কুকুরছানাগুলোর তখন তিন সপ্তাহ বয়স হয়েছে, অর্থাৎ তারা টলমল করে হাঁটতে পারে৷ একটু ডাকতেও পারে৷ খুব ভোর৷ একজনের ওপরে একজন চড়ে একটা জীবন্ত গরম পিরামিড বানিয়ে ওরা ঘুমোচ্ছিল৷ পাটকিলে তখন সেখানে ছিল না, যদিও একটু পরেই সে ফিরে আসে৷ ওদের
গায়ে এক বালতি ঠান্ডা জল ঢেলে দেওয়া হয়৷ ভিজে চুপসোনো বাচ্চাগুলো ঠক্-ঠক্ করে কাঁপে৷ কাঁউ কাঁউ করে সরু কান্না জানায়৷ কিন্তু পরে, রোদ ওঠার কিছুক্ষণের মধ্যেই দেখা গেল যে হিমঠান্ডা জলের সেই ধাক্কা তারা খুব একটা গায়ে মাখেনি৷ বরং এ-ওকে যথারীতি কামড়াচ্ছে, জড়াজড়ি করে খেলা করছে এবং মা এলেই ঝাঁপিয়ে পড়ছে দুধ খাওয়ার জন্য৷ বালতির ঠান্ডা জলে কাজ হল না দেখে বেশ কিছুটা দূর থেকেই বাচ্চাগুলোকে লক্ষ করে একটা আধলা, কোণা-ভাঙা ইট ছোঁড়া হয়৷ ইটটা অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়৷ পাটকিলে অনেক ইট-ছোঁড়া দেখলেও তার বুঝতে অসুবিধে হয়নি যে এবারের এই এত বড়ো ইটটার উড়ে আসা এবং ফুট খানেক দূরে ফুটপাথে চিড় ধরিয়ে আছড়ে পড়ার মধ্যে সুস্পষ্ট একটা সংকেত, একটা ইঙ্গিত রয়েছে৷ যে-দিক থেকে আধলা ইটটা এসেছিল, সে-দিকে লক্ষ করে পাটকিলে কয়েকবার রাগী গলায় ডাকল৷ তারপরই কুঁই কুঁই শব্দ করতে করতে বাচ্চাগুলোকে শুঁকতে লাগল৷ কিন্তু পাটকিলে এখানে আর থাকেনি৷ চারটে বাচ্চা নিয়ে সে ওখান থেকে চলে যায়৷ বরাবরের জন্যে৷ কোথায় সেটা পরে জানা যাবে৷
আপাতদৃষ্টিতে এই তিনটি ঘটনার মধ্যে কোনো মিল কি ধরা পড়ে? নিশ্চয় পড়ে৷ এবং যোগসূত্রটা যে অশুভ সেটাও ব্যাখ্যার অপেক্ষা রাখে না৷ এরপরই শুরু হয়ে গেল কলকাতাকে কুকুর-শূন্য করার সর্বাত্মক অভিযান, কারণ নতুন সহস্রাব্দে নতুন সাজে যে মহানগরী মায়ারাক্ষসীর মতো সাজছে, সেখানে কুকুরদের কোনো জায়গা থাকতে পারে না৷ এটা যখন ঘোষিত নীতি হিসেবে গ্রহণ করা হয় এবং প্রয়োজনীয় অনুমোদন, সম্মতি ও শিলমোহর অর্জন করতে থাকে তখন এর বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ ভিন্ন দুটি শিবির সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করেছিল যদিও কোনো লাভ হয়নি৷ এক হচ্ছে, জীবদের প্রতি নির্মমতার বিরুদ্ধে যে সংগঠনগুলি সক্রিয় এবং দু-নম্বর হল, নানা দামের জলাতঙ্ক-প্রতিরোধক ওষুধ যে সব কোম্পানিগুলি বানায়৷ পৃথিবীতে এমন কোনো পরিকল্পনা হতে পারে না, তার মেয়াদ যাই হোক না কেন, যাতে সব পক্ষকে খুশি করে কাজে নামা যায়৷ এবং এই পরিকল্পনা কোনো ব্যক্তি বা দল বা দলের জোট যেই নিক না কেন কিছু এসে যায় না৷ প্রথমত, সবপক্ষের কথা শুনলে চলে না বা শোনা হয় না৷ দ্বিতীয়ত, পরিকল্পনাটি চালু হবার পরে তার নিজস্ব ভরবেগে চলতে থাকে৷ এবং তৃতীয়ত, এ-রকমও হতে দেখা গেছে যে পরিকল্পনাটি লাগামছাড়া ঘোড়ার মতো ছুটছে, সামনে যা কিছু পড়ছে তা হ্রেষায় ও উত্তপ্ত নিঃশ্বাসে উড়িয়ে দিচ্ছে এবং পরিকল্পনা যারা করেছিল তারাই সেই ঘোড়ার ছুটন্ত পায়ের লাথিতে ছিটকে পড়ছে, নাল-বাঁধানো ক্ষুরে তাদের চশমা ও ক্যালকুলেটার চৌচির হয়ে যাচ্ছে এবং ধুলোর ঝড় উঠে দশদিক আড়াল করছে, যাকে আসন্ন সন্ধ্যা বলে ভুল করে পাখিরা বাসায় ফিরে আসছে৷ দিনকে রাত ও রাতকে দিন বানাবার এই ম্যাজিক, পরিকল্পনার আওতাতে পড়ে৷ নিছকই যা ম্যাজিক, ভেলকি বা ভোজবাজি, তার পেছনেও কিন্তু বজ্রকঠোর পরিকল্পনা থাকে৷ অপরিকল্পিত অলৌকিক বলে কিছুই সম্ভব নয়৷ এই নিয়ম মেনেই কুকুর-খেদা অভিযানে একাধিক পরিকল্পনা করা হয়েছিল৷
‘আমরা কি এই সত্যটি মানুষের ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করতে পারি? কেন পারা যাবে না? মানুষ আর কুকুরের মধ্যে স্নায়বিক ব্যবস্থার প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি যদি অভিন্ন হয়, তাহলে আমার মনে হয় না যে, মানুষের পক্ষে এটা অপমানজনক বলে মনে হবে৷ আজ জীববিদ্যায় আমরা যে শিক্ষালাভ করেছি তার পরিপ্রেক্ষিতে কেউই এই তুলনা টানার বিরুদ্ধবাদী হতে পারে না৷’
‘ইভান পেত্রোভিচ পাভলভ৷’