লুব্ধক – ৭
৭
জ্বেলেছ কি জ্বালাব
আগুন খুনের বদলা জেনো খুন
নাচালেই বেয়াদব ঝুঁটি
ঝুলব কামড়ে ধরে টুঁটি
-হ্যালো! হ্যালো! শুনতে পাচ্ছেন৷ ১ নম্বর পিঁজরাপোল থেকে বলছি৷
-শোনা যাচ্ছে তবে লাইনে ঝড়ের মতো শব্দ হচ্ছে৷
-এখানে একের পর এক আশ্চর্য সব ঘটনা ঘটছে৷
-সারা কলকাতা জুড়েই আশ্চর্য ঘটনা ঘটছে৷ সমস্ত রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে কুকুরেরা৷ ওখানকার কী অবস্থা৷
-এমনিতে খারাপ কিছু নয়, কিন্তু ঝোড়ো বাতাসে আমরা কুকুরের কান্না শুনতে পাচ্ছি৷ ওদিকে বুড়ো কুকুরেরা সবাই একসঙ্গে সামনের থাবাগুলো ওপরে তুলে আকাশে কী যেন সব বলছে যদিও কোনো বোধগম্য শব্দ আমাদের কানে আসেনি৷
-ওখানে যা হচ্ছে সব ভিডিয়োতে তোলা থাকছে তো? এদিকে বি-বি-সি আর সি-এন-এন ওদের খবরে কুকুরদের মিছিলের ছবি দেখিয়েছে৷ বাধ্য হয়ে আমাদেরও দেখাতে হচ্ছে৷
-এবারে শুনুন৷ ওই বুড়ো কুকুরদের মধ্যে আমরা হঠাৎ দেখলাম একটি বিশাল কুকুর যার চোখ দুটো আগুনের আলো নিয়ে জ্বলছে৷ একজন এখানে বলছে যে ইজিপশিয়ান মিথলজির বইতে অনুবিস-এর যে বর্ণনা আছে তার সঙ্গে পুরো মিলে যাচ্ছে৷ সেই টেরাকোটা রং, লম্বাটে শিকারি হাউন্ডের গড়ন৷ পিঁজরাপোল-১ তিনদিন ধরে তালাবন্ধ৷ কোথা দিয়ে অতবড়ো কুকুরটা ঢুকল আমরা ভেবে পাচ্ছি না৷
-অন্যান্য অনেক জায়গাতেই নাকি ওই কুকুরটিকে, যাকে আপনারা অনুবিস বলছেন, দেখা যাচ্ছে৷
-এদিকে সহসা অনুবিসকে আর দেখা যাচ্ছে না৷ গোটা পিঁজরাপোল জুড়ে ওরা গোল হয়ে নাচছে৷ ধুলোতে ওদের থাবা এত জোরে ঘষছে যে ফুলকি ঠিকরে বেরোচ্ছে…
-অসম্ভব শব্দ হচ্ছে… অসংখ্য শেকল আছড়ালে যেমন…
-আমরা ১ নং পিঁজরাপোল খুলে দিচ্ছি৷
-এখানে কিছু শোনা যাচ্ছে না…
-আমরা ২ ও ৩ নম্বর পিঁজরাপোলও খুলে দেবার নির্দেশ পাঠাচ্ছি…
-কিছু শোনা যাচ্ছে না…
-হ্যালো! হ্যালো!
কুকুরদের মিছিল কেন, এই কুকুরের সচল নদী, কুকুরের এই লাভাস্রোত যাই বলা হোক না কেন এ দৃশ্যকে প্রকাশ করার ভাষা আমাদের জানা নেই৷ পৃথিবীর কোথাও, কখনও এরকম কোনো ঘটনা ঘটেছে বলে আমাদের কেউ বলেনি৷ জীবজন্তুদের মধ্যে এরকম ব্যাপক মাইগ্রেশন হতেই পারে বলে কোনো কোনো বিজ্ঞানী মনে করছেন৷ কিন্তু আমেরিকাতে লেমিংদের গণ-আত্মহত্যার সঙ্গে এর কোনো মিল নেই৷ সুশৃঙ্খল, সংঘবদ্ধ হাজার হাজার কুকুর প্রায় নীরবে, গম্ভীর মুখে কলকাতা ছেড়ে চলে যাচ্ছে৷ এই যে বিশাল আলোকিত সেতুটি আপনারা দেখছেন এটি হল গঙ্গার উপরে নির্মিত দ্বিতীয় সেতু৷ কুকুরদের মহামিছিল এই সেতু দিয়ে এগিয়ে চলেছে৷ আত্মহত্যার কোনো অভিপ্রায় থাকলে ওরা ওপর থেকে লাফ দিতেই পারত৷ নীচেই গভীর জল৷ বোঝা যাচ্ছে যে ওরা শহর ছেড়ে চলে যাচ্ছে৷ খেয়াল করে দেখুন-পুলিশের একটি পাইলট-ভ্যান এবং কোনো মাননীয় মন্ত্রীর গাড়ি কুকুর-সমুদ্রের মধ্যে অসহায় হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে৷ পাইলট-ভ্যানটির মাথায় নীল আলো জ্বলছে নিভছে৷ মন্ত্রীর গাড়ির ওপরে জ্বলছে লাল আলো৷ কলকাতার এই সচল কুকুর-সমুদ্র আপনাদের দেখাচ্ছে সি-এন-এন৷ একটি ছোট্ট ব্রেকের পর আমরা আবার এই আশ্চর্য দৃশ্যে ফিরে আসব…
গড়িয়াহাট রোডের দুটি লেনই কুকুরের স্রোতে বন্ধ৷ কুকুর-নদী বয়ে চলেছে বাইপাসের দিকে৷ চারপাশের যত গলি ও ছোটোখাটো রাস্তা- সবদিক দিয়েই কুকুররা আসছে৷ কেউ ছেঁচড়ে ছেঁচড়ে আসছে৷ কেউ মাঝে মধ্যে থেমে গিয়ে ল্যাজে বসা মাছিকে ধাওয়া করছে৷ আসছে ছোটো ছোটো কুকুর-ছানারা যারা এখনও চিন্তাই করে উঠতে পারছে না যে কত দীর্ঘ পথ তাদের যেতে হবে৷ বড়ো বড়ো বাড়ি, বুটজুতো-পরা পা, গাড়ির রাক্ষুসে চাকা, কোনোদিনও ওপারে পৌঁছোন যাবে না এমন রাস্তা, ট্রাক, বড়ো বড়ো আলোওয়ালা দোকান যার সামনের হাতে জিনিস-ভর্তি লোকেরা খালি মাড়িয়ে দেয়, সাইকেল, হিংস্র মোটরবাইক, মিনিবাস – এই সবকিছু, যার মধ্যে পরতে পরতে ভয় মিশে আছে, যা সবসময় বুঝিয়ে দেয় যে তোরা ফালতু, দুবলা, ভীতু, তোদের চোখে ভয়ের পিচুটি – সেই ভয়-দেখানো সবকিছু কেমন চুপ, কোণঠাসা ও অচল হয়ে পড়েছে৷ কাঁউ! কাঁউ! এই তো আমরা ছোটো ছোটো গলাতেই ডাকছি৷ হ্যাঁ, সবকিছু আজ আমাদের দখলে৷ ফুটপাতের কোনো প্রায়ান্ধকার কোণে, মায়ের পেট ঘেঁষে শুয়ে ড্যাবডেবে চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে আমরা তোমাদের কেরামতি অনেক দিন, অনেক যুগ, অনেক জন্মজন্মান্তর ধরে দেখছি৷ এবারে বারান্দায় ভিড় করে বা পর্দা সামান্য সরিয়ে বা গাড়ির ভেতরে বসে জানালার কাচ অসহায়ভাবে তুলে দিয়ে বা টিভির পর্দায় তোমরা আমাদের দেখো৷ আমরা কোথায় যাচ্ছি জানি না৷ বড়োরা যেতে বলেছে, যাচ্ছি৷ হ্যাঁ, তোমাদের শহর, তোমাদের দোকানপাট, তোমাদের বাজার, হোটেল, মুরগি কাটার বঁটি, মাংস ঝলসাবার লৌহশলাকা, টিভি টাওয়ার, কসাইখানা, থানা, বন্দুক, লাঠি, পতাকা, সি ডি প্লেয়ার, তোমাদের সার্জন, অ্যানাসথেটিস্ট, নেতা – সব তোমাদেরই থাকছে৷ আমরাই চলে যাচ্ছি৷ তবে মাথা নিচু করে নয়৷ সসম্মানে৷ তোমরা বসে বসে আমাদের প্রত্যাখ্যানে অভিশপ্ত শহরে অন্ধ যখের মতো এবার তোমাদের ধন-সম্পদ আগলাও৷ চলে যাচ্ছি ট্রামলাইন, চলে যাচ্ছি ফোয়ারা, চলে যাচ্ছি জেব্রা ক্রসিং, বিকল হয়ে যাওয়া ট্রাফিকের আলো, বর্শা দিয়ে বানানো রেলিং, চলে যাচ্ছি আকাশে কাটাকুটি খেলা কেবলের তার, রোলের দোকানে তাওয়ার এরিনাতে খণ্ড খণ্ড ক্লাউন মাংসের ওলট-পালট খাওয়া, চলে যাচ্ছি হতভম্ব জলের কল, ঝাঁঝরি, পিঁপড়েতে খেয়ে নেওয়া গাছের গুঁড়ি, দাঁত উপড়ে নেবার চেয়ার, চলে যাচ্ছি, চলে চলে যাচ্ছি দলে দলে, বড়োদের সঙ্গে, আমরা ছানা-কুকুরেরা৷ তোমরা তোমাদের পিঁজরাপোল নিয়ে আনন্দে থাকো, বিকেলে ভেতরে বেড়াতেও পারো বা নিজেরা নিজেদের আটকে রেখে, না খেতে দিয়ে, না জল দিয়ে মজা করতে পারো৷ আমাদের ছোটো ছোটো পা খুব একটা জোরে ছুটতে পারে না৷ কিন্তু চেষ্টা করছি আমরা বড়োদের সঙ্গে সমানতালে থাকার৷ তোমাদের নিষ্ঠুরতা, অবজ্ঞা, তোমাদের নির্মমতা, তোমাদের লোভ, তোমাদের অজ্ঞতা বুযমেরাং হয়ে ফিরে আসছে বুঝতে পারছ না? হ্যাঁ, যাওয়ার সময়ে সগর্বে, মাথা উঁচু করে বলে যাচ্ছি কথাগুলো, কিন্তু কোনো কিছুই বোঝার ক্ষমতা তোমাদের নেই৷ মরুভূমির চোরাবালিতে বা মেরুর তুষারঝড়ে তলিয়ে যাওয়ার সময়, চাপা পড়ার সময়, অন্তিমলগ্নে বিশ্বাসঘাতকদের এরকমই হয়৷ আমাদের ছোটো ছোটো কানগুলো লাফাতে লাফাতে তোমাদের ওপরে যা নেমে আসছে তাকে সম্মতি জানাচ্ছে৷ এত সংখ্যায় আমরা, ছোটো কুকুরছানারা, কখনও এক জায়গায় হইনি৷ হলামই বা যদি খেলা করার বা এর ওর সঙ্গে চেনাশোনা করার কোনো ফুরসতনেই৷ এর জন্যে দায়ি কারা? তোমরা৷ এই যে আমাদের খিদে পাচ্ছে, জল তেষ্টা পাচ্ছে, শক্ত রাস্তায় নরম থাবা আর নখ ব্যথা ভুলে অবশ একাগ্রতায় এগিয়ে চলেছে, এই কুকুর-সমুদ্রের ঢেউ, এই কুকুর-রাত্রি এর জন্য দায়ি কারা? তোমরা৷ হ্যাঁ, হাতে ওয়াকিটকি, কোমরের হোলস্টারে রিভলভার, চোখে কালো চশমা, পা ফাঁক করে স্তম্ভের মতো দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশ সার্জেন্ট, তুমি খিলান বা দরজার মতোই দাঁড়িয়ে থাকো৷ নড়লেই আমাদের গায় পা লাগবে৷ এবং ঘটনাটা যদি একবার ঘটে তাহলে আজ কেন, আর তোমার কখনোই বাড়ি ফেরা হবে না৷ মাছ, মাংস, তরি-তরকারি, ফল, কোল্ড ড্রিংকস্ বোঝাই যত লরি আটকে গেছে তার চালকেরা সাবধান৷ একটা চাকাও যদি একটুও গড়ায় তাহলে এই বিশাল শান্ত সমুদ্র কিন্তু একটা বিরাট হাঙর হয়ে হাঁ করবে যার মধ্যে প্রবেশ করলে আর বেরোবার রাস্তা নেই৷ হেডলাইটগুলো নিভিয়ে দাও৷ আমাদের চোখে লাগছে৷ কাঁউ! কাঁউ!
হেডলাইটগুলো পর পর নিভে যায়৷ যেন দৈত্যরা একে একে অন্ধ হয়ে গেল৷ সার্জেন্টও তিলমাত্র নড়ে না৷ তার কালো চশমায় কুকুর-মিছিলের প্রতিফলন৷ হোলস্টারের ভেতরে রিভলভার ঘামছে৷ স্ট্যাচু! অবশ্য এমনই অভব্য যে সহসা ‘হাইল হিটলার’ বলে চেঁচিয়ে উঠতে পারে৷ এবং কে বলতে পারে যে আরও বহু গলনালি ও মুখের কোটর থেকে এই চিত্কারকে অনুরূপ হুংকার দিয়ে সমর্থন জানানো হবে না? কলকাতা এখন মাফিয়ার শহর৷ এই শহরে কুকুরদের পক্ষে থাকা অসম্মানজনক৷ তাই এই শহরকে চারপায়ে লাথি মারতে মারতে তারা চলে যাচ্ছে৷ ঘেউ! ঘেউ!
কান-গজানো বলল,
-জিপসি, এরকম দৃশ্য কলকাতা কখনও বাপের জন্মে দেখেনি৷
-দেখেনি, আর দেখবেও না৷
-মুখগুলো দেখেছিস৷ কেমন কাঁচুমাচু হয়ে গেছে৷ আমতা আমতা করেও একটা কথা মুখে সরছে না৷
-আসলে ভেবেই পাচ্ছে না যে বাপারটা কী হচ্ছে৷ বেশি বুদ্ধি যারা ধরে তাদের শেষে এরকম বোবা মেরে যেতে হয়৷
-আমার কিন্তু ওদের জন্যে একটু খারাপও লাগছে৷ কেমন নিয়তির হাতে নিজেদের সঁপে দিয়েছে৷
-ব্রয়লার৷ দেখতে মানুষের মতো৷ আসলে ব্রয়লার৷ আমার কিন্তু ওদের জন্যে এতটুকু খারাপও লাগছে না৷
-ওরা কিন্তু এখনও জানে না যে কী হতে চলেছে৷
-ঠিক এরকমই হয়৷ অনেক কিছুই জানা থাকে না৷ হঠাৎ আকাশ ভাঙার মতো নেমে আসে৷
ওরা নিজেদের মধ্যে কথা বলতে বলতে খেয়ালই করেনি যে বাদামী আর বেড়ালও এই ম্যারাথন যাত্রায় ওদের পাশে এসে পড়েছে৷
-এই! তোরা বেকার কথা বলে দম নষ্ট করছিস কেন? আমাদের আরও জোরে চলতে হবে৷ জোরসে…
-কোথায় যাচ্ছি আমরা? সেটাই তো মাথায় ঢুকছে না৷ জায়গাটা জানা থাকলে সুবিধে হত না?
-কোনো জায়গা নেই৷ যতটা পারা যায় দূরে চলে যেতে হবে৷ যতটা পারা যায়৷
দুনিয়ার খবর জানাচ্ছে বি.বি.সি৷ দুনিয়ায় যা কিছু ঘটছে৷ সে যেখানেই হোক৷ আমাদের ভ্রাম্যমান সংবাদদাতারা প্রতি ঘন্টায় খবর পৌঁছে দিচ্ছে আপনাদের ঘরে… আমরা কলকাতাকে জানি ‘সিটি অফ দা ড্রেডফুল নাইট’ হিসেবে বা ‘দা গ্রেট ক্যালকাটা কিলিং’-এর সুবাদে৷ কিন্তু ভবিষ্যতের পৃথিবী কুকুরদের এই মহা এক্সোডাস-এর জন্যেই ক্যালকাটাকে জানবে৷ কলকাতা থেকে বাইরের দিকে যত রাস্তা বেরিয়েছে, সব রাস্তা, সব জাতীয় সড়ক বা এক্সপ্রেসওয়ে চলমান কুকুরের দঙ্গল দখল করে নিয়েছে৷ অসমর্থিত খবরে প্রকাশ যে ‘নাসা’-র জনৈক বিজ্ঞানী নাকি লাতিন আমেরিকার একটি টিভি চ্যানেলে বলেছেন যে কলকাতার ওপরে মহাবিপর্যয় ঘনিয়ে আসছে৷ এর বেশি তিনি কিছু বলতে রাজি হননি৷ জেনিভাতে জনৈক দেশত্যাগী রুশ জ্যোর্তিবিজ্ঞানী বলেছেন যে এই বিপর্যয় সম্বন্ধে প্রয়োজনীয় তথ্য ‘নাসা’-র কাছে রয়েছে কিন্তু রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য তারা কোনো খবর জানাচ্ছে না৷
আমাদের ক্যামেরা এখন রাস্তার পাশে৷ কুকুরদের উচ্চতাতেই রাখা৷ স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে যে মাঝে মধ্যে পাপি-দের কাঁই! কাঁই! কাউ! কাউ! এছাড়া একমাত্র যে-শব্দ তা কুকুরদের হাঁপানোর৷ জানা গেছে যে মুষ্টিমেয় বেড়ালও এই শহরত্যাগী কুকুরদের দলে রয়েছে৷ পিঁজরাপোল-১, ২, ও ৩ খুলে দেওয়া হয়েছে৷ তবে ২ ও ৩-এ অসংখ্য কুকুরের মৃতদেহ ছাড়া আর কিছুই নেই৷ কলকাতাবাসী যে বিজ্ঞানীর আবেদনে শেষ অবধি পিঁজরাপোল খুলে দেওয়া হয় আমাদের প্রতিনিধিকে তিনি একটি সাক্ষাত্কারে একটু আগেই বলেছেন… (ঝিরিঝিরি পর্দা ও যান্ত্রিক কোলাহল)…
বি-বি-সি : আপনি তো এই গোটা ব্যাপারটার সঙ্গে গোড়া থেকেই জড়িত৷ কী মনে হচ্ছে আপনার?
বিজ্ঞানী : আমার মনে হচ্ছে কুকুরদের ওপরে নিপীড়নমূলক অভিযান চালানো খুবই অন্যায় হয়েছে৷ এতটা স্পষ্টভাবে না বললেও আগেই আমি প্রতিবাদ জানিয়েছিলাম… এখন সত্যি বলতে আমি আর বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে কোনো ব্যাখ্যা খুঁজে পাচ্ছি না?
বি-বি-সি: কীসের ব্যাখ্যা খুঁজে পাচ্ছেন না?
বিজ্ঞানী : এই কুকুরটির ফোটোগ্রাফ দেখুন৷ টেরাকোটা র-৷ বিশাল চেহারা৷ সাধারণ বড়ো কুকুরের অন্তত তিনগুণ৷ এবার দেখুন, মিশরীয় মিথোলজির বইতে অলৌকিক কুকুর-দেবতা অনুবিসের ছবি৷ কী করে এরকম ঘটা সম্ভব?
বি-বি-সি : এই ফোটোটি যে জাল নয় তার প্রমাণ কী?
বিজ্ঞানী : তার মানে? আমি নিজে ছবিটা তুলেছি৷
বি-বি-সি : আপনার কী মনে হয়? কী হতে চলেছে?
বিজ্ঞানী : আমি জানি না৷ বিশ্বাস করুন আমার কোনো আন্দাজই নেই এ ব্যাপারে৷ তবে আমার মন বারবার বলছে যে ভালো কিছু হবে না, হতে পারে না…
আমাদের প্রতিনিধি বলেছেন যে এই অসংলগ্ন কথার থেকে কোনো স্পষ্ট হদিশ পাওয়া সম্ভব নয়৷
এইমাত্র খবর পাওয়া গেল যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউনাইটেড কিংডম ও জার্মান দূতাবাস থেকে কলকাতা দূতাবাসের কর্মীদের অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে৷ কুকুরদের এক্সোডাস সম্বন্ধে নতুন খবর পাওয়া মাত্র আমরা আপনাদের জানাব… স্টে টিউনড্…
কুকুর-সমুদ্রের ওপরে উড়ছিল ছায়াপথ ধরে ছায়া-কুকুরেরা৷ সেখানে মেঘে মেঘে পা রেখে এগোতে হয়৷
লাইকা বলল,
-ওদের গতি আরও বাড়ানো উচিত৷ এখনও ওরা বিপদসীমা পেরোয়নি৷
অনুবিস জবাব দিল,
-তবে পেরিয়ে যাবে৷ এখনও সাত ঘন্টা বাকি আছে৷