Accessibility Tools

সোনার কৌটো – আশাপূর্ণা দেবী

সোনার কৌটো – ৪

আপন স্ত্রী পুত্রের কাছে যে নির্ভরতা, সে জিনিস রমেশ কখনো পাননি। শাশুড়ীর তাঁবে পিষে থাকা স্ত্রী চিরদিনই আড়ালে ফুঁসেছে আর রমেশের ভীরুতাকে দায়ী করেছে।

বুড়ো মা আর কার না থাকে?

তা বলে বুড়ো ছেলে তাঁর খোকা হয়ে থাকবে?

অন্ন বললো, তা তিনি কই?

রমেশ বললেন, এই তো আমার সঙ্গে সিংহবাহিনীর মন্দিরে গেলেন। সন্ধ্যে আরতি দেখবেন বলে বসে রইলেন। আমাকে বললেন মিষ্টিটা কিনে নিয়ে ছেলেপুলেদের দিতে। আমি বললাম দশ টাকার মিষ্টি খাবে কে? শুনলেন না। তবু আমি বলেছি, বেশ আজ পাঁচ টাকার নিয়ে যাই, কাল পাঁচ টাকার নিয়ে যাবো।

টাকা ছড়াচ্ছেন!

রাজবালা বলেন, জলে জল বাঁধাবেন।

রমেশ মাষ্টার বিষণ্ণ হন।

প্রথম থেকেই রাজবালা অমন শক্রপক্ষের মত না করলেও পারতো। সত্যি, তাঁরও তো অধিকার আছে। তিনিও তো এবাড়ির বৌ। এতোদিন কিছু নেননি বলে, একবারও কিছু নেবেন না, এমন প্রত্যাশাই বা কেন?

ওনাকে তা’হলে আবার আনতে যেতে হবে। অন্ন বলে।

রমেশ মাষ্টার গম্ভীর গলায় বলেন, ওনাকে না বলে জ্যেঠিমাকে বল অন্ন! সেটাই সভ্যতা। নিজের আচরণ নিজেকেই ছোট করে, বড় করে!…আনতে যেতে উনি বারণ করছিলেন, বললেন, একবার যে রাস্তা দিয়ে এসেছি, সে রাস্তা ভুলবো না, তোমার আর কষ্ট করে আসতে হবে না! তা আমি তো সেই কথা মেনে নিশ্চিন্তি হয়ে বসে থাকতে পারি না। যাবো, আরতির ঘণ্টা বাজাতে শুনলেই যাবো।

* * *

ফেরার সময় গল্প করতে করতে আসেন শশীতারা।

আশ্চর্য দেখো ভাই, কখনো আসিনি, বসিনি, তবু মনে হলো যেন কতো কতোবারই ওই চাতালে বসে আরতি দেখেছি। মায়ের মুখও যেন চেনা! আসলে শিশুকালের স্মৃতি পাথরে কেটে বসে। সেই বৌ বেলায় জোড়ে এনে বসিয়ে দিয়েছিলেন, আরতির ঘণ্টা কাঁসর বাজছিল। মনের মধ্যে এখনই যেন সেই ঘণ্টা কাঁসরই বাজছিল।

রমেশ অভিভূত হচ্ছিলেন।

এই ধরনের কথা বড় একটা শুনতে পান না তিনি। বাড়িতে মেয়ে বৌয়ের কথা টথা অন্য ধরণের। কেমন ভোঁতা ভোঁতা সাদা মাঠা।

কিন্তু শশীঠাকরুণের কথায় ভঙ্গীটাও কি হঠাৎ এই বীরনগরে এসে বদলে যাচ্ছে না? তিনিই বা কবে এমন স্বপ্নাচ্ছন্ন গলায় কথা বলেন? তাঁর ভাষাতো মারকাটারি।

একেই বলে আপন জন!

রমেশ মাষ্টার বলেন, এই এতোকাল তুমিই বা কোথায় ছিলে, আর আমিই বা কোথায় ছিলাম। অথচ দেখো, যেই এসে দাঁড়ালে, মনে হলো চিরকালের আপনার লোক।

শশীতারা সকৌতুকে বলেন, সে তুমি ভাল মানুষ বলে। নচেৎ অন্য লোক হলে পত্র পাঠ বিদেয় করে দিতো।

বিদেয় করে দিতো?

দিতো না? ভাগের ভাগীদারকে কোন বুদ্ধিমান আবার আসন পেতে বসায়?

হেসে ওঠেন দু’জনেই।

খোলা গলায়।

পথচলতি দু’একজন তাকিয়ে দেখে। রমেশ মাষ্টার তাদের একজনকে ডেকে বলেন, ওহে রজনী শোনো সুখবর। এই আমার বড়ভাজ এসেছেন। বাড়ির বড়গিন্নী। আমার যে দাদা সেই অল্প বয়সে—

হ্যাঁ জানি, আপনার একজন বৈমাত্র দাদা ছিলেন শুনেছি।

সেই আর কি! ফুলপুরের চাটুয্যেদের মেয়ে। জানো তো? যাঁদের মস্ত নাম ডাক। তা সেখানেই থেকেছেন বরাবর। এখন একবার দেখাশুনা করতে এলেন।

রজনী হেঁট হয়ে প্রণাম করে বললো, তা বেশ বেশ! থাকবেন তো আজ্ঞে।

শশীঠাকরুণ বলেন, দেখি, তোমরা থাকতে দেবে কিনা। বীরনগরের বীর পুরুষদের কি ব্যবস্থা!

সে কি ঠাকুমা। আপনার শ্বশুরের ভিটে। আমরা থাকতে দেবার কে?

রজনী বলে, আচ্ছা মাষ্টার কাকা, কাল যাবো একবার আপনাদের বৌমাকে নিয়ে।

হ্যাঁ হ্যাঁ, নিশ্চয় নিশ্চয়।

পথে এমন অনেকের সঙ্গেই দেখা হয়।

অনেকেই কৌতূহলাক্রান্ত।

কৌতূহলাক্রান্ত আরো এই জন্যে—

বিনা নোটিশে হঠাৎ এসে পড়া এই বড় গিন্নির সঙ্গে দ্যাওরের এমন সম্প্রীতি হলো কখন? রাস্তায় হাসি গল্প করতে করতে যাবার মতন?

তাহলে মাষ্টারই কি বলে কয়ে আনিয়েছেন? মা বিহনে গিন্নী হতে? পরিবার তো অকর্মার ঢেঁকি। না আছে ব্যবস্থা, না আছে ছিরিছাঁদ।

তাই সম্ভব।

নিজেই চুপি চুপি গিয়ে নিয়ে এসেছেন।

ওদিকে মায়ে ঝিয়ে ছটফট করছে। আরতি থেমে গেছে কখন তার ঠিক নেই। এখনো ফেরবার নামটি নেই কেন? ওই চালাক মেয়েমানুষটি, যার ভাইপো উকিল, ভুলিয়ে ভালিয়ে ঠাকুর বাড়ীতে বসে কিছুতে সই করিয়ে নিচ্ছে না তো?

হঠাৎ সিংহবাহিনী দেখবার জন্যেই বা এতো উতলা কেন? হয়তো সেই ভাইপোটা সেখানে বসে ছিল কাগজ পত্র নিয়ে।

হে ভগবান! হঠাৎ এ কি বিপদ!

ভালমানুষ লোকটাকে ঠকিয়ে মকিয়ে কি লিখিয়ে নেবে কে জানে।

অনেক ভাবনা, আর মায়ে ঝিয়ে অনেক মন্তব্যের পর এক সময় দেখা গেল ঢুকলেন দুজনে।

অন্ন চট করে সরে গেল।

কিন্তু শশীঠাকরুণের চোখকে ফাঁকি দেবে তুচ্ছ ওই অন্নপূর্ণা?

শশীঠাকরুণ নিজস্ব ভঙ্গিতে ডাক দিলেন, জ্যেঠিকে দেখেই সরে গেলে কেন গো মেয়ে? নামও ত জানি না ছাই। দাও দিকি, পা ধোবার একটু জল দাও। একদিনের অতিথি তো নই, থাকতে এসেছি যখন, সামনে না বেরোলে চলবে?

অগত্যাই অন্ন একঘটি জল এনে পায়ের কাছে বসিয়ে দিয়ে একটা প্রণাম করে।

শশীঠাকরুণ ‘থাক থাক রাজার মা হও’ বলে আশীর্বাদ করে ঘটিটা নিয়ে পা ধুতে ধুতে বলেন, যাই বলো ঠাকুরপো, তোমার পরিবার ভাগ্যি তেঁতুল গোলা। নিজেরও শিক্ষা সহবতের অভাব, মেয়েকেও শেখাতে পারেনি। এমন একটু শিক্ষা হয়নি ভাই যে, মেয়েকে বলবে, জ্যেঠির পাটা ধুইয়ে দে। আমার নিজের জন্যে বলছি না মা! মনে কিছু করো না, তোমাদের উচিত শিক্ষার জন্যেই বলছি। তা নাম কি মা?

অন্ন নতমুখে বলে, অন্নপূর্ণা।

আহা এমন রাজরাজেশ্বরী চেহারা, এমন নাম, ভাগ্যি দ্যাখো! ভগবানের কি খেলা! মেয়ে তোমার মতনই হয়েছে মনে হয় কি বল ঠাকুরপো। ছেলেরা কেমন? মায়ের মতন না তোমার মতন?

রমেশ বলেন, ওই মিলিয়ে মিশিয়ে।

শশীঠাকরুণ এবার আসল কথায় আসেন। বলেন, তা মা অন্ন, জ্যেঠি হই, একটা সৎ উপদেশ দিতে পারি, সে অধিকার আছে। রাগ করিস নে। এই বয়স, এই রূপ, আর এমন অভাগা ভাগ্য, বেশী পাড়া বেড়িয়ে বেড়ানো ভাল নয়।

মেয়ের তথ্য শশীঠাকরুণ তখনই জেনে বুঝে গেছেন।

বিধবার পোড়ামুখ দেখাবার ভয়ে ঘরে লুকিয়ে নেই সে, পাড়ায় গিয়েছে সে তাস খেলতে।

শশীতারার এই কঠোর বাণীতে অন্ন তো ছিটকে উঠতে পারতো। অন্ন তো ভেবেই রেখেছিল গ্রাহ্য করবে না। গোড়া থেকেই অবহেলা করবে। কিছু বলতে এলে শুনিয়ে দেবে।

কিন্তু হঠাৎ যেন মূক হয়ে গেল সে।

শশীঠাকরুণের ব্যক্তিত্বের প্রভাব?

রমেশ মাষ্টার মেয়েকে চুপ করে থাকতে দেখে হঠাৎ সাহসে উদ্দীপ্ত হয়ে বলেন, তাই বল তো বড়বৌ! আমিও তো সেই কথা বলি। যাক এবার তুমি এসেছো, আমি নিশ্চিন্ত। এখন থেকে তুমিই দেখবে শুনবে, শাসন করবে, চালাবে। নিশ্বাস ফেলেন রমেশ মাষ্টার।

যেন একটা ক্লান্ত মাঝি তার হাতের হালটা আর এক মাঝির হাতে তুলে দিয়ে নিশ্বাস ফেললো।

শশীঠাকরুণের হাসিটা বড় সুন্দর।

ফুলপুরের সবাই বলে, কে বলবে বয়েস হয়েছে। আড়াল থেকে শুনলে মনে হবে ঝি বৌ হাসছে। প্রাণ খোলা হাসি।

শশীঠাকরুণ সেই হাসিটি হেসে বলেন, বাঃ চমৎকার! তোমার কথা শুনে মনে হচ্ছে ঠাকুরপো, আমি যেন মৌরুসী পাট্টা করে এখানে এসে বসেছি। আসার আগে তো সেখানের গ্রামসুদ্ধু ঝুড়তে লাগলো, কেন যাচ্ছো? কবে আসবে?

রমেশ মাষ্টার কৃতার্থমন্যের গলায় বলেন, দয়া করে যখন একবার পায়ের ধুলো দিয়েছো, সহজে ছাড়ছিনে। তারা তো অনেক কাল ভোগ করেছে বাবা!

যেন শশীঠাকরুণ একটা সম্পত্তি।

রাজবালা জ্বলতে থাকেন, কিন্তু কিছুতেই ফট করে অসভ্যের মতো কিছু একটা বলে উঠতে পারেন না।

শুধু আড়ালে গিয়ে মেয়ের কাছে গজরান, তোর বাপের ভঙ্গিমা দেখছিস? কিরকম আদেখলে হ্যাঙলার মতন করছে। যেন বর্তে গেছে। জানি না বাবা গুণ তুক জানেন কিনা উনি। ওই ঠাকুর মন্দিরে নিয়ে গিয়ে এতোক্ষণ দেরী করায় আমার রীতিমত সন্দেহ হচ্ছে।

তা রাজবালার সন্দেহকে উড়িয়েও দেওয়া যায় না।

রমেশ মাষ্টার নামের মানুষটাকে কে যেন হঠাৎ বশীকরণ মন্ত্রেই অভিভূত করে ফেলেছে।

রমেশ মাষ্টারের আর সেই রুক্ষ শুকনো মেজাজ নেই। রমেশ মাষ্টার ইস্কুল থেকে ফিরে বিছানায় শুয়ে কড়িকাঠ দেখার পরিবর্তে সারা সন্ধ্যে দস্তুর মতো হাসি গল্প করেন।

আবার এমনি মজা, এই আড্ডায় আস্তে আস্তে দু’চারজন লোকও জুটছে।

তারা বলে, সত্যি, বাঁড়ুয্যে বাড়ির বড়গিন্নী একখানা মানুষের মতন মানুষ বটে।

কিন্তু তাদের গিন্নীরা সে কথা বলে না। গিন্নীরা সকলেই প্রায় রাজবালার দুদলে।

কোথা থেকে উড়ে এসে জুড়ে বসে মানুষটাকে যেন গ্রাস করে নিয়েছে। না হয় বয়েস হয়েছে, তবু আছে কিছু মোহিনী মায়া। নচেৎ অতো বশ হয় লোকটা?

অথচ মতলব বোঝা যাচ্ছে না।

কী যে করতে চায় কে জানে।

ভাগ ভেন্নর কথা তো মুখেও আনছে না।

কেবল পাড়ার খবর নেওয়া, দেশের খবর নেওয়া। আর চাষীবাসীদের দুঃখ ধান্ধার বার্তা শোনা।

রাজবালা তো আড়ালই পায় না যে, স্বামীকে গঞ্জনা দেবে।

সকাল থেকেই ‘বড়বৌ বড়বৌ’।

বড়বৌ, আজ কি রাঁধছো, বড়বৌ, আজ লক্ষ্মীকান্তর মন্দিরে যাবে তো বল, সকাল সকাল ইস্কুল থেকে চলে আসবো।…বড়বৌ, নাতি দুটোকে একটু শাসন কোরো, লেখা পড়ায় মোটে মন নেই।

আর বড়বৌ বলেন, কী রাঁধবো? তুমি কী খাবে তাই বল? নিরামিষ ঘরের তরকারি তুমি ভালোবাসো এতো আমার হাতের ভাগ্যি গো! তবু শ্বশুরের বংশের একজনকেও হাতের রান্না খাওয়াতে পেলাম দু’দিন।

আবার বলেন, আজ আর মন্দিরে যাবো না ভাই, পূর্ণিমের দিন বরং সকালের দিকে উপোস করে যাবো। তোমার ছুটি পড়ছে।

আবার বলেন, নাতিদের শাসন করতে আছে? তাহলে ঠ্যাঙা নিয়ে তেড়ে আসবে না? হবে হবে, মাষ্টার দাদামশাইয়ের নাতি কি আর মুখ্যু হবে? ভয় নেই, সৎ আছে।

কেমন সাবলীল কথা।

রাজবালা শোনে আর রাগে তার গা জ্বলে যায়।

শশীঠাকরুণ যখন পূজোয় বসেন, সেইটুকুই অবকাশ, তা সে সময়টা তো রমেশ মাষ্টার নিজের নাওয়া টাওয়া, ইস্কুলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েই থাকেন। আর খাওয়ার সময় শশীঠাকরুণ এসে সামনে বসেন এবং সোহাগের বন্যা বইয়ে ‘আরো খাও! ওকি খাওয়া হলো? ওই খাওয়ায় কি শরীর টেকে?’ এই সব করতে থাকেন।

তা আজ ওই পূজোর অবকাশটায় গিয়ে স্বামীকে চেপে ধরে রাজবালা, বলি তোমার হলোটা কী? মানুষটা কী তোমায় গুণ তুক করলো?

রমেশ মাষ্টার ওই কুটিল মুখটার দিকে ঘৃণার দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলেন, করেছে! হলো?

দেখো, ওসব অগ্রাহ্যর কথা চলবে না। সব সময় কিসের তোমাদের এতো পরামর্শ তাই আমি জানতে চাই, কেবল ফুসফুস গুজ গুজ। আমায় দেখলেই চুপ হয়ে যাওয়া, এর মানে?

রমেশ মাষ্টার কৌটোতে নস্যি ভরতে ভরতে বলেন, মানে এই—তোমার কানে একটা কথা উঠলে পাড়াসুদ্ধ লোক জেনে যাবে।

তা লোককে না জানিয়ে কী করা হচ্ছে সেটাই জানতে চাই।

হলে দেখতে পাবে।

আমি কিন্তু পাড়ায় পাড়ায় রটিয়ে আসবো ওই উনি এসে গুণ তুক করে চুপি চুপি তোমার কাছ থেকে বিষয় সম্পত্তি সব লিখিয়ে নিচ্ছেন।

রটিয়ে এসো। বলে রমেশ গট গটিয়ে রান্নাঘরের দাওয়ায় এসে আসনে বসে বলেন, ভাতটা দেবে? না ঝগড়া করবে?

আশ্চর্য, রমেশ মাষ্টারের বসার ভঙ্গীও যেন বদলে গেছে। মেয়ে এসে ঘাড়ে পড়া পর্যন্ত তো তুঁষ হয়ে গিয়েছিল। নইলে নয় ছাড়া কথাই বলতো না। তাও ক্লান্ত ভাবে। এখন যেন টগবগ করে।

আর ওই পরামর্শ।

কান পেতেও বোঝা যায় না। কী যে বলাবলি করে?

তা ছাড়া দুজনে এক সঙ্গে পথে বেরোনোও তো আছে। ঠাকুর দেবতাটা ছুতো, ওই হাসি গল্প পরামর্শই আসল। যেন দুটো বয়েস কালের দ্যাওর ভাজ। তা বয়েস কালের হলে তো অন্য মানে খুঁজে পাওয়া যেতো। এটা কী?

রাজবালার সন্দেহটা একেবারে অমূলক বলা যায় না।

জীবনের সমস্ত বয়েস পার করে আসা এই দুটো বুড়োবুড়ি দিব্যি এক ছেলেমানুষী খেলায় মেতেছে। সেই তামাদি হয়ে যাওয়া কালে প্রায় সমবয়সী দুটো বালক বালিকা বড়দের চোখ ছাড়িয়ে ছাতের কোণে ইঁটের খেলাঘর পেতে কাঁঠাল পাতার লুচি ভেজে খেয়ে যে আহ্লাদ অনুভব করতে পারতো, এখন যেন সেই আহ্লাদটাই অনুভব করছে ওরা। যেন কোথাও একটা খেলাঘরই পেতেছে এই সব বড়দের চোখ এড়িয়ে।

তাই সব পরামর্শ চুপিচাপি।

বৌ মেয়ে এলেই অন্য কথা।

অন্ন এদিক ওদিক কান পেতে বাবার গলা সদ্য শুনতে পেলো, ‘নগদ তো দেবে, কিন্তু অতোগুলো টাকা নিয়ে তুমি একা আসবে?’

কিন্তু যেই অন্ন ঘরে ঢুকলো, অন্নর বাবা বলে উঠলো, তাহলে ওই কথাই থাকলো বড়বৌ! সামনের অমাবস্যায় তুমি মা সিংহবাহিনীর ভোগ চড়াবে। কি ভোগ দিতে চাও? ময়দা না খিচুড়ী ভোগ?

শশীঠাকরুণ বলেন, নামটা করছো কেন বাপু, চালে ডালে বলতে হয়।

আবার অন্ন সরে গেলেই শশীতারা গলা নামিয়ে বলেন, তখন যেন কাক পক্ষীতেও জানতে না পারে। ভাঙচি দেওয়ার লোকের অভাব নেই দেশে। আসল কাজটা হয়ে যাক আগে, তারপর ঢাক পিটিও। পিটোতে তো হবেই। ছাত পিটান মানেই ঢাক পিটোনো।

আসল কাজটা আর কিছুই নয়, বিঘে দশেক জমি বেচা। স্টেশনের ধারে যে গরু চরার মাঠটা রয়েছে ওটা যে রমেশদের, তা এতদিন অনেকেই জানত না। কিন্তু শশীঠাকরুণ যে কেমন করে এই কদিনেই সব জেনে ফেলেছেন কে জানে?

জেনে ফেলেই ধরে বসলেন।

আর শশীঠাকরুণের ধরা এবং কাঁকড়া বিছের ধরায় তো বিশেষ প্রভেদ নেই। ধরেছেন যখন, না করে ছাড়বেন না।

চব্বিশ বিঘে জমি তোমাদের, আর তোমাদের এই হাড়ির হাল?

শশীঠাকরুণ বলেছেন, এ হাল ঘোচাতে হবে। মা লক্ষ্মীকে পুঁতে রেখে কোনো লাভ নেই, খেলাতে হয় তাঁকে। হাটে বাজারে নিয়ে গিয়ে খেলাতে হয়।

রমেশ মাষ্টারের বুকে এতো বল ছিল না যে, ওই রকম দুরূহ একটা কাজে হাত দেবেন। রমেশ মাষ্টার ওই চব্বিশ বিঘে জমিই বুকে নিয়েই মরতেন, ওর খানিকটা বেচে দিয়ে হাড়ির হাল ঘোচানো যায়, তা ভাবতেই পারতেন না।

রাজবালা?

তাঁর কোনো বুদ্ধির বালাই—ই নেই।

স্বামীকে সুপরামর্শ দিয়ে, সাহস দিয়ে, দশের একজন হবার যোগ্যতা অর্জন করবার শক্তি এনে দেবেন এমন মহিলা নন তিনি! সব কিছুতেই তার সন্দেহ। রমেশ কিছু করতে গেলেই রাজবালা বলেন, ডুববে! এইবার ডুববে তুমি!

কিন্তু শশীঠাকরুণের প্রাবল্য রমেশ মাষ্টারকে সাহস এনে দেয়, শক্তি এনে দেয়।

লুকিয়ে লুকিয়ে খদ্দের ঠিক করে ফেলেন রমেশ।

শশীতারা বলেছেন, আমার তো কিছু ভাগ ছিল ভাই, তা সেইটাই ধর বেচছি। আপোসে ভাগ করে নিয়ে এমন করা যায়। ফুলপুরে যতো ভাগ ভেন্নর পরামর্শদাতা তো ছিলাম এই আমি। বিনা মামলায় কাজ মেটাতাম। আমি তোমায় লেখাপড়া করে দেবো—আমার আর কোনো দাবি দাওয়া রইল না। এই দশ বিঘা জমির মূল্য বাবদ দশহাজার টাকা আমার শ্বশুরের ভিটে সংস্কারের কাজে লাগানো হবে। আর এইজন্যই আসা আমার এতোদিন পরে।

রমেশ মাষ্টার বলেছিলেন, কিন্তু বড়বৌ, তোমার সবটা দিয়ে বাড়ি সারাবে, তুমি কি এখানে বাস করতে আসবে?

শশীতারা হেসে বলেছেন, তা কী বলা যায়? বলে মানুষের মন না মতি। তা বাস করতে চাইলে তুমি থাকতে দেবে না?

কী বলছো বড়বৌ! তুমি এসেছো, যেন মাথার ওপর ছাতা পেয়েছি। যেন পর্বতের আড়াল পেয়েছি।

কিন্তু তোমার বৌ রেগে রেগে মরছে।

ওর কথা বাদ দাও। ওই স্বভাব ওর। মায়ের কাছে একটু বেশীক্ষণ বসলে রেগে মরতো। বলতো, চিরটা কাল খোকা হয়েই থাকলে! সংসারে যেন কাজের কথা নেই।

তা কাজের কথায় মধ্যে তো ছেলেদের আচরণের নিন্দে, আর বৌদের গালাগালি দেওয়া। ও আমার ভাল লাগে না। এই যে তোমার সঙ্গে গল্প করি, কতো আলাত পালাত গল্প, তবু যেন প্রাণে শান্তি আসে।

তবে পৃথিবী কি চায় কারো প্রাণে শান্তি আসুক? চায় না! পৃথিবী সেই শান্তিটা ভঙ্গ করবার জন্যে তোড়জোড় করে।

কিন্তু আপাতত ঝুনো শশীতারা আর পাগলা রমেশ মাষ্টার একই জগতে আছেন। নিজেদের গড়া একটা স্বপ্নের জগতে।

শশীতারা বলেন, বাড়ির চেহারাটা ঠায় ঠিকই থাক বুঝলে ঠাকুরপো, বদলে কাজ নেই। কর্তারা যেমন গড়েছেন, তেমনি থাকুক। শুধু বালির চাপড়া খসিয়ে ভাল করে বালি কাজ ধরাও। জানলা দরজাগুলো অবিশ্যি বদল টদল করতে হবে, কাঠ একেবারে খেয়ে গেছে। আচ্ছা বাড়ির রংটা কেমন হবে?

রমেশ বলেন, সে কথার আমি কি জানি? তোমার যা পছন্দ।

না না, সেটা ঠিক নয়। বৌ মেয়ের সঙ্গে একবার পরামর্শ করে রায় দাও।

ওরা আবার পরামর্শ দেবে। হুঁঃ!

তা হোক। আমার ভাইপোদেরও আমি বলি, তোরা কোনো কাজে হ্যাঁ বলে বসবার আগে, একবার পরিবারের সঙ্গে পরামর্শ করে নিস বাপু! শেষকালে বৌ যেন না বলতে পারে আমায় একবার জানালোও না।

রমেশের কাছে শশীঠাকরুণের এই ভাইপোদের গল্পও কম আকর্ষণীয় নয়। রমেশের সঙ্গে রমেশের মা ব্যতীত আর কোন মেয়েমানুষ কখনো এমন কাছে বসে গল্প করেনি।

তা মায়ের গল্পের মধ্যে তো অন্য কোন জগৎ ছিল না, মায়ের জগৎ রমেশেরই জানা জগৎ। হাড় হদ্দ জেনে যাওয়া পচা জগৎ। শশীতারা রমেশের সামনে অন্য এক জগতের দরজা খুলে ধরেন। রমেশ মন দিয়ে শোনেন আর বুদ্ধি দিয়ে বোঝেন, সেখানে সেই বড় মানুষদের ঘরে শশীতারার কতো প্রতিপত্তি! শুধু ভাইপোদের ঘরেই নয়, সারা ফুলপুর গ্রামটাতেই কতো প্রতিপত্তি শশীতারার বুঝতে পারেন রমেশ মাষ্টার।

সেই মানুষ এইখানে এইভাবে পড়ে আছেন।

রমেশ মাষ্টার বিগলিত হবেন না? রমেশ মাষ্টার কৃতকৃতার্থ হবেন না?

শুধুই কি পড়ে থাকা?

রমেশের হিতের জন্যেই পড়ে থাকা।

রমেশের এমন শুভানুধ্যায়িণী আর কে আছে?

জমি বেচা হচ্ছে, এ খবর চাপা থাকে না। যতোই চুপিচুপি হোক প্রকাশ হয়েই পড়ে।

রাজবালা বোঝেন বানের জল ঘরের উঠোনে এসে গেছে। রাজবালা বোঝেন আগুন ঘরের মটকায় লেগেছে। সর্বনাশের আর বাকি নেই কিছু।

রাজবালা আর থাকতে পারেন না, অন্নকে দিয়ে ছেলেদের চিঠি লেখান। তা এসে যায়, বড় ছেলে এসেও যায়। ব্যাপারটা তো যা তা নয়।

তখন রমেশও নেই শশীতারাও নেই, ওঁরা গেছেন কেষ্টনগরে। বীরনগর বাদকুল্লার লোকের তো কোটকাছারী করতে ওই কেষ্টনগর ছাড়া গতি নেই।

বড় ছেলে জীবেশ গুম হয়ে বসে থেকে বলে, তোমার স্থির বিশ্বাস ওই সব তুকটুক করেছে?

তা ছাড়া? তা নইলে এইসব ঘটনা সম্ভব? যে জমি তোদের ঠাকুর্দার বাপের আমল থেকে পড়ে আছে, কেউ একদিনের জন্যে তাতে নোখ ডোবাবার কথা ভাবেনি, সেই জমি উনি এলেন আর বেচলেন? আমিও তো বরাবর শুনেছি, ওটা গোচারণ ভূমি। ওটা কর্তারা পুণ্যির জমি বলে ছেড়ে রেখেছিলেন। সেকালে এসব করত। জলাশয় করে দেওয়া, গোচারণের মাঠ ছেড়ে রেখে দেওয়া। তা বাপ—ঠাকুর্দার স্বর্গবাসের সেই টিকিটখানি তুমি বংশধর হয়ে ছিঁড়ে ফেলছ?

জীবেশ অবশ্য মায়ের এ যুক্তি মানে না।

জমিটা বেচা হচ্ছে এটা মন্দ নয়। এ সুমতি যে হয়েছে এতোদিনে রমেশ মাষ্টারের এটা ভাল।

কিন্তু জমি বেচা টাকাটা অন্য একজন এসে নিয়ে যাবে, এটা তো সহ্যের বস্তু নয়!

জীবেশ বলল, আচ্ছা আসুন ফিরে দেখছি, আমি। একটা অশিক্ষিত বুড়ি মেয়েমানুষ তাকে এতো ভয়!

আহা বেচারী জীবেশ!

মানুষ যে না বুঝে কতো প্রতিজ্ঞাই করে বসে।

জীবেশ তো জিভ শানিয়ে বসেছিল।

কিন্তু হলোটা কী?

হলো এই, ষ্টেশনের পথ থেকে সাইকেল রিকশয় আসতে আসতেই জীবেশের আসার খবরটা পাওয়া হয়ে গেল। রিক্সওলাই দিল। বললো, এই তো তিনটের গাড়িতে বড়দাদা বাবু এলো কলকাতা থেকে।

অতএব শশীঠাকরুণ বাড়িতে পা দিয়েই ডাক পাড়লেন, কই গো নবাবের জামাই, দেখি একবার মূর্তিখানা। এতোদিন এসেছি ছেলেদের দেখে চক্ষু সার্থক তো হয়নি। বলি শনিবারে একবার বাড়ি আসতে হয় না?

রমেশ মাষ্টারের এখন পৃষ্টবল রয়েছে তাই তিনি বলে ওঠেন, বাড়িকে বাড়ি ভাবলে তো।

শশীঠাকরুণ সর্বদাই ন্যায়ের পক্ষে, তাই তৎক্ষণাৎ বলে ওঠেন, তা দোষও দিতে পারিনে বাপু ছেলেদের। বাড়ির যা ছিরিছাঁদ আর যা অসুবিধে, এতে কি আর আসতে মন যায়? কলকাতার সুখ সুবিধে আরাম আয়েস রপ্ত হয়ে গেছে। এরপর আসে কিনা দেখো। আকর্ষণ হতেই হবে।

কার পর? জীবেশ জানে না সে কথা।

জীবেশ যা কিছু বলবে বলে ভেবে রেখেছিল, সবই কেমন গুবলেট হয়ে গেল। এই অভিজাত চেহারার দীর্ঘাঙ্গী মহিলাটির দিকে তাকিয়ে কেমন যেন থতমত খেয়ে গেল।

শশীঠাকরুণ কোর্ট কাছারি করতে গিয়েছিলেন। তাই পরণে পাট ভাঙা গরদের থান, গায়ে গরদের চাদর জড়ানো, কাটাছাঁটা মুখের রেখায় একটি দৃপ্ত এবং বিশ্বনস্যাৎ ভাব।

এই মুখের সামনে চট করে কিছু বলা যায় না। যা করা যায় শুধু তাই করলো সে। হেঁট হয়ে একটা প্রণাম করে গুজ গুজ করে বললো, সময় টময় হয় না।

শশীঠাকরুণ বললেন, তা অবিশ্যি। গরমেণ্টের ঘরে মোটা মাইনের চাকরী করছো, বৌ ছেলে আছে, সময়ের অভাব। তবে এটুকু না বলে পারছি না বাবা, মানুষ হওয়ার মূল্যটা কী, যদি না দেশে ঘরে দেশের একজন হয়ে বংশ পরিচয় দিতে পারলে! সেখানে তুমি যতই রাজার হালে থাকো, তোমার জ্ঞাতি গোত্তর তো দেখতে যাচ্ছে না? আর শহর বাজারে রাজার ওপর বাদশা আছে। তোমার মতন রাজা গড়াগড়ি যাচ্ছে। অথচ দেশে গাঁয়ে তুমি বনগাঁয় শেয়াল রাজা। তা ছাড়া বাপ ঠাকুর্দার ভিটেখানা যে হুড়মুড়িয়ে তোমার বাপের মাথার ওপর এসে পড়ছে, ওটাও তো দেখবে?

একসঙ্গে এতোগুলি কথা বলে শশীঠাকরুণ দ্বিতীয় হাঁক পাড়েন, অন্ন, ঘর থেকে একটা বাসন আন, খাবারটা ধর। দাদাকে দে, ছেলেপুলেকে দে। কেষ্টনগরের সরপুরিয়া। অবিশ্যি এখন আর সে রামও নেই সে অযোধ্যাও নেই। শুধু নামটুকু আছে। তা ওই নামটুকু খা।

একখানা রিকশয় দ্যাওর ভাজের ঠাসাঠাসি করে আসা দেখে রাজবালার সর্বাঙ্গ জ্বলছিল, আরো জ্বলে গেল ছেলের চুপ করে থাকা দেখে। অথচ এই একটু আগেও বলছিল, বাবা তাঁর ভক্তি সৌজন্য নিয়ে থাকুন, আমি কটাকট শুনিয়ে দেব। সোজা বলবো, জমি বেচতে গেলেন আপনি কোন অধিকারে? আগে ভাগের মামলা করে বিষয় নিজের করে নিন, তারপরে যা হয় হবে। বাবাকে ভাল মানুষ পেয়েছেন, কিন্তু আমরা ভাল মানুষ নই।

তা হতভাগা ছেলে এতো কথার একটা বললো না। দিব্যি সরপুরিয়া খেতে বসলো? ওই সর্বনেশে মেয়ে মানুষের চোখের দৃষ্টিতেই তুক আছে।

রাজবালার আর সহ্য হয় না। রাজবালা ঘর থেকে বেরিয়ে এসে বলেন, কইরে জীবু, কী যেন বলবি বলছিলি?

জীবেশ অপ্রতিভ ভাবে বলে, হবে হবে। আজই তো চলে যাচ্ছি না।

কবে আর হবে? আজ না হোক, তুমি তো কাল সকালেই লম্বা দেবে বাবা! যা বলবার জন্যে কলকাতা থেকে ধাওয়া করে এলে—

জীবেশ বোঝে, সত্যিই তার কর্তব্য কর্মে ত্রুটি হয়ে যাচ্ছে। অতএব বাপের দিকে তাকিয়ে বলে বসে, হ্যাঁ বলবার জন্যেই যখন আসতে হয়েছে, বলতেই হবে বাবা! কথাটা হচ্ছে—শুনলাম নাকি ষ্টেশনের ধারে জমি বেচা হচ্ছে।

হচ্ছে কী, হয়ে গেছে তো! এই তো, সেই সব করে কর্ম্মেই তো কেষ্টনগর থেকে এলাম। বললেন শশীতারা অগ্রাহ্য ভরে।

ওঃ। কিন্তু বাবাকেই বলি, আমাদের সঙ্গে একবার পরামর্শ করবারও দরকার বিবেচনা করলে না?

রমেশ সভয়ে একবার ছেলের ও একবার শশীতারার মুখের দিকে তাকান।

শশীতারার আর অবস্থাটা বুঝতে বাকি থাকে না। শশীতারা হাল ধরেন। বেশ মাজা চড়া গলায় বলেন, পরামর্শর উপযুক্ত বেটা হলে অবিশ্যিই করতো। তবে কি না তা যখন নয়, তখন আর তোমার মুখে কথাটা শোভা পেলো না বাবা! যে ছেলে বছরে একদিন মা বাপকে দেখতে আসবার সময় পায় না, তার যে আবার বিষয় আশয় নিয়ে পরামর্শ করবার সময় হবে, বাপ তা জানবে কেমন করে, তা হল? আর জমি যা বেচা হয়েছে, তা আমার। বোধহয় এটুকু জানো, আমি এবাড়ির বৌ। আমার অবিশ্যিই দাবি দাওয়া কিছু আছে? চব্বিশ বিঘে জমির ভাগ অবিশ্যিই আমার প্রাপ্য হতে পারে। পারে কি না? সেইটুকুই আমার ইচ্ছে, মত করেছি। ইচ্ছে হয় ক্ষ্যামতায় কুলোয়—নালিশ ঠুকে দাও গে বাপ জ্যেঠির নামে।

সমস্ত পরিবেশটার ওপর এই হাতুড়িটি বসিয়ে আর সমস্ত আলোচনার ওপর যবনিকা পাত করে দিয়ে চান করতে পুকুরে চলে যান শশীতারা।

রাজবালা ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়েন, জীবেশও উঠে পাশের ঘরে চলে যায়, অন্ন আর দুখানা সরপুরিয়া নিয়ে চুপিচুপি ছেলেদের ডাকতে যায়। শূন্য দালানটায় বসে থাকেন রমেশ। কিন্তু আশ্চর্য রমেশের কোন ভয় করছে না। আগে হলে তো ছেলেকে দেখেই ভয় করত।