Accessibility Tools

বইয়ের নাম - লেখক
হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য হাফ-ব্লাড প্রিন্স (৬) – জে. কে. রাওলিং
হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য হাফ-ব্লাড প্রিন্স (৬) – জে. কে. রাওলিং
0/30
হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য হাফ-ব্লাড প্রিন্স (৬) – জে. কে. রাওলিং

০৬. ড্র্যাকোস ডিট্যুর

০৬. ড্র্যাকোস ডিট্যুর

পরের কয়েক সপ্তাহ হ্যারি দ্য ব্যাপোর উদ্যানেই কাটালো। দিনের বেলায় ও টু-এ-সাইড কিডিচ খেলে সময় কাটায়। ও আর হারমিওন একদিকে, অন্যদিকে রন আর জিনি। হারমিওন তেমন খেলতে পারে না, জিনি ভাল খেলতে পারে। সন্ধে বেলায় খুব খায়। একাই তিনজনের খাবার। মিসেস উইসলি টেবিলে যা রাখেন একাই প্রায় সব সাবাড় করে।

ছুটির দিনগুলো সত্যি নিরবচ্ছিন্ন আনন্দের হতো, যদি না নিত্য ডেইলি প্রফেট নানারকম অপ্রীতিকর ঘটনার খবর না ছাপতো। খবর থাকে অন্তর্ধানের, বিশ্রী সব। দুর্ঘটনার, অস্বাভাবিক মৃত্যহত্যা ইত্যাদি ঘটনার। কখনো কখনো খবরের কাগজে সেইসব অবাঞ্ছনীয় সংবাদ প্রকাশের আগেই বিল, মিস্টার উইসলি বাড়ি ফিরে সেসব খবর দেন। হ্যারির ষোল বছর পূর্ণ হবার জন্মদিন মাটি হয়ে গেল। বার্থ ডে পার্টি চলাকালীন রেমাস লুপিনের (ওয়েরউলফ, প্রফেসর ডিফেন্স এগেন্সট ডার্ক আর্টস) লোমহর্ষক এক খবর বলার জন্য। লুপিনকে অত্যন্ত রোগা এবং কঠিন দেখাচ্ছিল। বাদামি রঙের চুলগুলো ধূসর চুলের সঙ্গে মিশে এলোমেলো, পরনের বস্ত্র সচরাচর জীর্ণ থাকে তার চেয়েও জীর্ণ আর তালি দেয়া।

মিসেস উইসলি পিনকে বেশ বড় দেখে এক টুকরো বার্থ-ডে কেক এগিয়ে দিতেই লুপিন বললেন, ডিমেন্টররা আরো দুটো ভয়াবহ আক্রমণ করেছে আর ইগর কারকারফের মৃতদেহ একটা চালা ঘরে ওরা পেয়েছে। উনি রক্ত চোষাদের সঙ্গে সব রকম সম্পর্ক ত্যাগ করার পর প্রায় এক বছর বেঁচে ছিলেন। যতদূর আমার মনে পড়ে সিরিয়সের ভাই রেগুলাস মাত্র কয়েকদিন নিজেকে বাঁচাতে পেরেছিল।

মিসেস উইসলির আনন্দ উৎসবে ওই রকম দুঃখজনক খবর দেয়া মোটেই ভাল লাগেনি তাই বললেন, ও আচ্ছা, এ বিষয়ে আমরা পরে আলোচনা করবো। এখন অন্য বিষয়ে কথা বলা যাক। বিল জিজ্ঞেস করলো, রেমাস, আপনি কি ফ্লোরিয়ন ফোর্টেসকিউ সম্বন্ধে কিছু শুনেছেন? ফ্লেউর তখন বিলকে ওয়াইন সার্ভ করছিলো, মানে যে লোকটার একটা আইসক্রিমের দোকান ছিলো।

হ্যারি বললো, ও সেই ডায়াগন এ্যালির আইসক্রিমওয়ালা? উনি তো আমাকে আইসক্রিম খাওয়াতেন, দাম নিতেন না। তার কী হয়েছে?

তাকে দোকান থেকে টেনে বার করা হয়েছে।

কেন? রন বললো। মিসেস উইসলি তখন তীক্ষ্ণভাবে বিলের দিকে তাকালেন।

কে জানে? মনে হয় ওদের বিরুদ্ধে কিছু বলেছিলেন, মোটামুটি ভাল মানুষ ছিলেন ফ্লোরিয়ন।

ডায়াগন এ্যালির কথা বলছেন, মিস্টার উইসলি বললেন মনে হচ্ছে অলিভান্ডার অবস্থা একই রকম কিছু ঘটেছে।

ও যিনি জাদুদণ্ড বানান? জিনি চমকে উঠে বললো।

হ্যাঁ তিনি। দোকান শূন্য, তিনি নেই, কোনো ধ্বস্তাধ্বস্তির চিহ্ন নেই, কেউ বলতে পারছে না, স্বেচ্ছায় দোকান ছেড়ে গেছেন, না তাকে কেউ কিডন্যাপ করেছে।

তাহলে লোকেরা কোথা থেকে দণ্ড কিনবে?

অন্য কারও কাছে যাবে, লুপিন বললেন। কিন্তু অলিভাণ্ডারের দণ্ড সবচাইতে ভালো, যদি অপর পক্ষ ওকে ধরে নিয়ে যায় তাহলে আমাদের পক্ষে ব্যাপারটা শুভ নয় মোটেই।

সেই বিষণ্ণ জন্মদিনের পরের দিন ওদের কাছে হোগার্টস স্কুল থেকে চিঠি এলো, বুকলিস্ট এলো। আলাদা একটা চিঠি পেয়ে হ্যারি খুব আশ্চর্য হয়ে গেল। ওকে স্কুলের কিডিচের ক্যাপ্টেন করা হয়েছে।

খবরটা পেয়ে আনন্দে উফুল্ল হয়ে হারমিওন বললো, জানো, কিডিচের ক্যাপ্টেন (অধিনায়ক) আর প্রিফেক্টের মর্যাদা একই। এখন থেকে তুমি আমাদের স্পেশাল বাথরুম ব্যবহার করতে পারবে, আরো অনেক কিছু সুযোগ সুবিধে পাবে।

ওয়াও, আমার স্পষ্ট মনে আছে, চার্লি একবার এই রকম একটা ব্যাজ পেয়েছিলো, রন হেসে বললো। হ্যারি, তুমি আমাদের টিমের ক্যাপ্টেন, ভাবতে দরুণ মজা লাগছে, হি হি হি, তুমি টিম থেকে আমায় বাদ দেবে না তো? হি হি হি!

মিসেস উইসলি রনের বুকলিস্ট দেখে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বললেন, আমাদের তো এখন ডায়াগন এ্যালিতে যেতে হবে, দেরি করলে চলবে না। শনিবার তোমার বাবার কাজে যেতে হবে না সেদিন গেলেই ভালো হবে, আমি তোমাদের বাবাকে সঙ্গে নিয়ে যেতে চাই, একলা যেতে চাই না।

 রন হাসি চেপে বললো, মাম, তোমার কি মনে হয় ইউ-নো-হু বই-এর দোকানের পেছনে লুকিয়ে আছেন?

ফোর্টেসকিউ ও অলিভান্ডার কি ছুটিতে গেছেন? মিসেস উইসলি বললেন, কথায় উম্মার ছাপ। সিকিউরিটি মোটেই হাসির ব্যাপার নয়, তাই যদি মনে করে থাকো তাহলে তোমরা বাড়িতে থাকো, দরকার হলে আমি একা গিয়ে বই খাতাপত্র কিনে আনতে পারবো।

 না না আমি যাবো। দেখে আসবো ফ্রেড জর্জ কেমন দোকান করেছে, রন একটুও দেরি না করে বললো।

তাহলে বেশি কথা না বলে চুপ করে থাকো বেশি কথা বললে তোমাকে আমি ঘরে রেখে যাব! মিসেস উইসলি রেগেমেগে কথাটা বলে ঘড়িটা টেনে নিলেন। ওরা সবাই দেখলো ঘড়িটার নটা কাঁটাই মর্টাল পেরিলে স্থির হয়ে রয়েছে। মিসেস উইসলি বোপর বাড়ি থেকে সদ্য কেচে আনা একটা তোয়ালেতে ঘড়িটা মুড়ে নিয়ে বললেন, এখন তোমরা হোগার্টসে যাবার জন্য সব গুছিয়ে টুছিয়ে নিতে আরম্ভ করো। শেষ মুহূর্তে এটা নেই সেটা নেই করবে না। কথাগুলো বলে তোয়ালেতে মোড়া ঘড়িটা নিয়ে মিসেস উইসলি হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়ে গেলেন।

রন বোকার মতো হ্যারির দিকে তাকিয়ে রইলো। ঈশ্বর রক্ষা করো, এখানে একটু ঠাট্টা তামাশাও করা যাবে না…।

যাহোক রন আগামী কয়েকটা দিন ভোল্ডেমর্টকে নিয়ে ফাজলামি করলো না। শনিবার পর্যন্ত মিসেস উইসলি তেমন কোনো রাগারাগি করলেন না, কিন্তু বরাবরই নাস্তার টেবিলে সকলকে খাবার দেবার সময় খুবই উত্তেজনা থাকে। বিল ঠিক করলো ফ্লেউরের সঙ্গে বাড়িতেই থাকবে! হারমিওন জিনি জেনে খুশি হলো। হ্যারিকে একটা মুদ্রা ভর্তি মানি ব্যাগ দিলো।

রন ক্ষেপে গেল বিলের ওপর, বাঃ আমাকে দিলে না যে?

ইডিয়ট ওটা হ্যারির মানি। বিল বললো। হ্যারি তোমার ভোল্ট থেকে নিজে নিলে কম করে পাঁচ পাঁচটি ঘণ্টা সময় নষ্ট হতো, অন্তত সকলের তাই হচ্ছে তাদের সোনা তুলে আনতে গিয়ে। গবলিনরা এখন অসম্ভব টাইট সিকিউরিটি করেছে। দুদিন আগে আর্কিয়ে ফিলপট ওর পরিচয় কার্ড সংক্রান্ত ব্যাপারে আটকে পড়েছিলো, …সহজ পথে এটা নিয়ে এসেছি।

হ্যারি পকেটে ওর সোনাগুলো রেখে দিয়ে বললো, ধন্যবাদ বিল।

ও দেখছি সব সময়ে একটা কিছু নিয়ে ভেবে চলেছে। বিলের নাকটা সকলের সামনে টিপে দিয়ে ফ্লেউর বললো। দৃশ্যটা দেখে হ্যারি কর্নফ্লেকস মুখে দিয়ে হাসতে গিয়ে বিষম খেলো; রন ওর পিঠে চাপড় মারলো। অন্য ধার থেকে জিনি মুখ বেঁকিয়ে ফ্লেউরকে ভেঙ্গালো।

সেদিন ছিলো আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। ব্যারোর সামনে এসে অপেক্ষা করছে মিনিস্ট্রির স্পেশাল ম্যাজিক কার। আগে একবার হ্যারি এই রকম গাড়িতে চেপে কিংক্রস স্টেশনে গিয়েছিল। ওরা সবাই ক্লোক গায়ে দিয়ে বাড়ির বাইরে এসে দাঁড়ালো।

রন গাড়িটা দেখতে দেখতে বললো, বাবা আবার গাড়িটা রিকুইজিশন করে এনেছেন, দারুণ মজা। ব্যারো থেকে গাড়িটা ওদের নিয়ে যাত্রা শুরু করার সময় বিল ও ফ্লেউর কিচেন উইন্ডো থেকে হাত তুলে শুভেচ্ছা জানালো। হ্যারি, রন, জিনি আর হারমিওন গাড়ির পেছনের সিটে হাত পা ছড়িয়ে বসলো। সিটটা বেশ চওড়া বসতে অসুবিধা হয় না।

মিস্টার উইসলি পিছন ফিরে হাসতে হাসতে বললেন, সব সময়ে কিন্তু এই মজার গাড়িটার আশা করবে না, একমাত্র হ্যারির জন্য আনিয়েছি।

মিনিস্ট্রির গাড়ির চালকের পাশে মিস্টার অ্যান্ড মিসেস উইসলি রয়েছেন। পরিসর খুব কম, অনেকটা টু সিটার সোফার মতো বসার জায়গা। মিনিস্ট্রি হ্যারিকে টপ গ্রেড সিকিউরিটি স্ট্যাটাস দিয়েছে। লিকি কলড্রনে পৌঁছলে বাড়তি সিকিউরিটি পেয়ে যাবো আমরা।

হ্যারি অরর পরিবেষ্টিত হয়ে দোকান বাজারে ঘুরতে মোটেই পছন্দ করে না। আগেই ও অদৃশ্য হবার ক্লোকটা আলখেল্লার পেছনে রেখেছে। অদৃশ্য হবার ক্লোকটা ডাম্বলডোর পছন্দ করেন, তাহলে মিনিস্ট্রিরও না পছন্দ করার কোনো হেতু নেই। হ্যারি অবশ্য জানে না ওর অদৃশ্য হবার ক্লোক সম্বন্ধে মিনিস্ট্রির কাছে কোনো ধারণা আছে কি নেই। একটু পরই ড্রাইভার বললো, আমরা এসে গেছি। গাড়ি চালাতে চালাতে ড্রাইভার প্রথম কথা বললো, ওরা সবাই কলকল খলখল করছে, কিন্তু ড্রাইভার মুখে কুলুপ এঁটে বসেছিলো। ও লিকি কলড্রনের কাছে চ্যারিং ক্রশ রোডে গাড়ির গতি থামিয়ে, গাড়িটা দাঁড় করিয়ে বললো। আপনাদের জন্য আমাকে অপেক্ষা করতে হবে, কখন আপনারা কাজ সেরে ফিরবেন?

মি. উইসলি বললেন, মনে হয় ঘণ্টা দুইর মধ্যে ফিরে আসবো। আহ দারুণ, ও এসে গেছে দেখছি।

হ্যারি মি. উইসলির কথা শুনে, কে এসে গেছে দেখার জন্য গাড়ির জানালা দিয়ে রাস্তায় তাকালো।

ও ভেবেছিলো হয়তো কোনো বিরাট সাইজের এক অররকে দেখবে কিন্তু তার বদলে অতি পরিচত এক মানুষকে দেখলো–হ্যাগ্রিড! লম্বা লম্বা কালো দাড়ি, পরনে উভচর জম্ভ বিভার লোমশ চামড়ার কোট। হ্যারিকে দেখতে পেয়ে খুশির দমকে মিটিমিটি হাসছেন! পাশ কাটিয়ে যাবার সময় মাগলরাও দেখছে হ্যাগ্রিডকে। হ্যাগ্রিডও ওদের বিস্ফারিত দৃষ্টির দিকে তাকিয়ে হাসছেন। তাকিয়ে থাকবার মতোই হ্যাগ্রিডের চেহারা।

হ্যারি, হ্যাগ্রিডকে দেখে গাড়ি থেকে একরকম লাফ দিয়ে রাস্তায় নেমে হ্যাগ্রিডের সামনে আসতেই হ্যাগ্রিড ওকে এমন জোরে দুহাতে বুকে চেপে ধললেন, হ্যারির মনে হলো ওর বুকের সব পাজরগুলো চুরচুর হয়ে গেছে।

হ্যাগ্রিড আনন্দে অধীর হয়ে বললেন, হ্যারি বাকবিক উইদার উইংগস আমার কাছে থেকে ভীষণ খুশি, তোমাকে ওরা দেখতে চায়, যেন মাঠে ফিরে এসে মনের সুখে নিঃশ্বাস নিচ্ছে।

হ্যারি ও বুকের পাঁজর টিপতে টিপতে বললো, আমিও খুশি হলাম। সিকিউরিটি মানে কী আপনি?

হো হো মিনিস্ট্রি চেয়েছিলো তোমার সিকিউরিটির জন্য এক ঝাঁক ঝানু অরর পাঠাতে; কিন্তু ডাম্বলডোর আমাকে আসতে বললেন। হ্যাগ্রিড গর্বের সঙ্গে বললেন। তারপর আঙ্গুল মটকাতে মটকাতে বললেন, চলো এবার যাওয়া যাক। মলি, আর্থার চলুন।

হ্যারির স্মৃতিতে লিকি কলড্রন ছিলো জনবহুল। এখন সেটা ফাঁকা। দোকান মালিক বৃদ্ধ টম, রোগা ডিগডিগে, দন্তহীন। সে দোকানে বসে মাছি মারছে। ওদের ভেতরে আসতে দেখে টমের কিছু বিক্রির আশা হলো। কিছু প্রশ্ন করার আগেই হ্যারি বললো, জুস পাসিন, টম বুজতে পেরেছেন নিশ্চয়ই। হোগার্টসের কেনাকাটা, জানেন তো।

 টম ঘাড় নাড়লো। তারপর দোকানের কাঁচের গ্লাস মুছতে আরম্ভ করলো। হ্যারি, হারমিওন, হ্যগ্রিড আর উইসলি বারের মধ্য দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে দোকানের পেছনে স্যাঁত স্যাঁতে ঠান্ডা উঠানে বসলো। কাছেই ছিলো আবর্জনা ফেলার ডাস্টবিন। হ্যাগ্রি হাতের গোলাপি ছাতাটা তুলতেই সামনের দেয়ালের ইট সরে গেল, দেখতে পেল একটা আর্চওয়ে, পাথর বাধানো রাস্তা। ওরা সেই আর্চওয়ে দিয়ে পাথরের রাস্তায় যাবার আগে ভাল করে চারদিক দেখে নিলো।

ডায়াগন এ্যালি আর সে রকম নেই। বাইরে থেকে দেখতে পাওয়া গেল না। ঝকঝকে দোকানের ভেতর থরে থরে সাজানো বই, স্পেল বই, পোশানের মাল মশলা, কলড্রন, সেগুলো ম্যাজিক মন্ত্রণালয়ের বিরাট বিরাট পোস্টারের আড়ালে চলে গেছে। সেই সব বিরাট বিরাট রক্তবর্ণের পোস্টারে শুধু আক্রমণ হলে কি করতে হবে, কি কর্তব্য তারই নির্দেশাবলী। সারা গ্রীষ্ম ধরেই ওই রকম পোস্টার মিনিস্ট্রি রাস্তায় বিলি করেছে। সেগুলো অবশ্য রঙিন। তাছাড়া রয়ছে পলাতক রক্তচোষাদের বিবরণ দিয়ে কালো সাদা ফটো। তাছাড়া রয়েছে একটা ওষুধের দোকানে, বেল্লাট্রিক্স লেস্ট্রেনজের ফটো! তাছাড়া আরো কিছু দোকানের জানালাতে, সাঁটানো রয়েছে ফ্লোরিয়েন ফোর্টেসকিউর আইসক্রিম পার্লারেও। তাছাড়া রাস্তার ফুটপাতে গজিয়ে উঠেছে নোংরা নোংরা দোকান। ফুরিশ অ্যান্ড। ব্লটসর দোকানের বাইরে একটা কার্ডবোর্ডের সাইন বোর্ড ঝুলছে :

মন্দ্রপুত কবচ : ওয়েরউলফ, ডিমেন্টস এবং ইনফেরির আক্রমণ প্রতিরোধের কবচ

একজন বেঁটে জাদুকরকে দেখলো হাতভর্তি রূপালি হার নিয়ে ঝনঝন শব্দ করে ঘুরছে ক্রেতা ধরার জন্য।

মিসেস উইসলিকে দেখিয়ে বললো, একটা নিন আপনার ওই ছোট মেয়েটার জন্য ম্যাডাম? জিনিকে দেখে বললো। এই হার ওর সুন্দর গলাকে রক্ষা করবে?

মিস্টার উইসলি রেগে মেগে বললেন, আমি ডিউটিতে থাকলে, দেখতাম ও কেমন করে লোকদের বোকা বানায়।

মিসেস উইসলি বললেন, আমাদের তাড়া আছে, তুমি বাপু ওকে অ্যারেস্ট ট্যারেস্ট করার চেষ্টা করো না। চলো প্রথমে আমরা ম্যাডাম মালকিনের শপে যাই। হারমিওন নতুন ড্রেস ও রোবস চায়, রনের স্কুল রোবসটা লম্বায় খাটো হয়ে গেছে। তোমারও তো নতুন একটা বোবস দরকার হ্যারি? দেখতে দেখতে তুমি ইয়া লম্বা হয়েছে! চলো চলো সব্বাই।

মি. উইসলি কথাটা শুনে বললেন, ম্যাডামের শপে সকলে এক সাথে গিয়ে ভিড় বাড়ানোর কোন মানে হয় না। তারচেয়ে ওরা গ্রিডের সঙ্গে যাক। নিজেদের পছন্দ মতো কিনবে। ফুরিশ অ্যান্ড ব্লটসে আমরা যাই স্কুলের পাঠ্য বই কিনতে।

 আমি ওসব জানি না। যতো তাড়াতাড়ি হয় জিনিসপত্র কিনে আমাদের বাড়ি ফেরা দরকার। হ্যাগ্রিড বলুন ঠিক বলেছি কি না?

কোনো ভয় নেই মলি। ওরা আমার সঙ্গে থাকলে কোনো চিন্তার কারণ নেই। বিরাট মোটা হাতটা নাড়তে নাড়তে হ্যাগ্রিড মিসেস উইসলিকে চিন্তা না করার জন্য বললেন।

মিসেস উইসলি স্কুলের পাঠ্য পুস্তক কেনার জন্য জিনিকে নিয়ে বুটসের দোকানের দিকে এগোতেই রন, হ্যারি আর হারমিওন হ্যাগ্রিডের সঙ্গে ম্যাডাম মালকিনের দোকানে গেল।

হ্যারি যেতে যেতে দেখলো ডায়াগন এ্যালিতে যারা কেনাকাটা করতে এসেছে তাদের সকলেরই মুখে ভীত-সন্ত্রস্ত ভাব। কথাবার্তা তেমন বলছে না, আপন আপন দলের সঙ্গে কেনাকেটা করছে। সকলেই দুচারজন করে দলে দলে, একা কেউ নেই।

দোকানের সামনে এসে হ্যাগ্রিড বললেন, আমি আর দোকানে ঢুকে ভিড় বাড়াতে চাই না, বাইরে দাঁড়াচ্ছি, তোমরা কেনাকাটা সেরে এখানে এসো। কথাটা বলে হ্যাগ্রিড বাইরে দাঁড়িয়ে কাঁচের জানালা দিয়ে ঘাড় নিচু করে ওদের দিকে নজর রাখলেন। এতো বেশি লম্বা যে ঘাড় নিচু করেও দেখতে পান না।

ওরা দোকানে ঢোকার আগে ভেবেছিলো দোকানের ভেতর তেমন ভিড় থাকবে না, কিন্তু দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে লক্ষ্য করলো যথেষ্ট ভিড়।

এগোতে এগোতে কানে এলো একটা ছোট্ট মেয়ের গলা–মা, আমি আর ছোট নই, তুমি এখানে দাঁড়াও, আমি একাই সব কিনতে পারবো। গলাটা ওদের খুব চেনা চেনা।

হ্যারি শুনতে পেলো ম্যাডাম মালকিনের গলা, না গো না, তোমার মা ঠিক বলেছেন, আমাদের কারও এখন একা একা ঘোরাফেরা করা ঠিক নয়, কে ছোটো, কে বড় সেটা বড় কথা নয়।

দাঁড়াও, আরে কোথায় তুমি পিনটা খুঁজছো, দাঁড়াবে।

ঠিক সেই সময় ওদের চোখ পড়লো ড্রেকো ম্যালফয়ের ওপর। ম্যালফয় তখন এক গাঢ় সবুজ রোবস পরে আয়নাতে নিজের চেহারা দেখছে। রোবসের এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে পিন গোঁজা নেই। পায়ের কাছে, হাতাতে। সে আয়নাতে রন, হ্যারি আর হারমিওনের প্রতিবিম্ব দেখতে পেল। ওরা তখন রোবস কেনার জন্য দাঁড়িয়েছে।

 নাকে কি তুমি কোনো গন্ধ পাচ্ছ মা! এই মাত্র এখানে একজন মাড-ব্লড এসে দাঁড়িয়েছে। ড্রেকো ম্যালফয় বললো।

তুমি এখানে দাঁড়িয়ে বাজে কথা বলবে না, বললেন ম্যাডাম মালকিন। হাতে তার মাপার ফিতে আর ম্যাজিক ওয়ান্ড। তাছাড়া আমার দোকানে কেউ জাদুদণ্ড ব্যবহার করে সেটা আমি মোটেই বরদাস্ত করবো না।

রন, আর হ্যারি তখন ম্যালফয়কে শিক্ষা দেবার জন্য তাদের জাদুদণ্ড উঁচু করেছে। হারমিওন ওদের পেছনে দাঁড়িয়েছিলো চাপা গলায় বললো, না না তোমরা এখানে ছুঁচো মেরে হাত গন্ধ করবেনা ওকে যা খুশি তাই বলতে দাও।

ওহো তোমরা দেখছি স্কুলের বাইরেও ম্যাজিক ব্যবহার করো?

ম্যালফয় ব্যাঙ্গ করে বললো। গ্রেঞ্জার, আহারে! কে তোমার চোখে আঘাত করেছে? যে করেছে তাকে আমি ফুল উপহার দেবো।

ম্যাডাম মালকিন বললেন, ঢের হয়েছে, ম্যাডাম ছেলেটিকে বারণ করুন দোকানে গোলমাল করতে। ম্যাডাম প্লিজ!

নারসিসা ম্যালফয় দোকানের র‍্যাকে জিনিসপত্র দেখছিলেন। ম্যাডাম মালকিনের কথা শুনে ওদের মাঝে এসে দাঁড়ালেন।

নারসিসা কঠিন স্বরে হ্যারি ও রনকে বললো, তোমরা জাদুদণ্ড নামিয়ে রাখো। যদি তোমরা আমার ছেলেকে আক্রমণ করো তাহলে বলেদিলাম আজ তোমাদের জীবনের শেষ দিন হবে।

তাই? হ্যারি বললো। সে এগিয়ে গেলো গোয়ার ম্যালয়ের দিকে। একদৃষ্টে ওর দিকে তাকিয়ে রইলো। অনেকটা ওর বোনের সঙ্গে মুখের আদল আছে। বোনের মতোই ড্রেকো লম্বা।

তাহলে বন্ধু কয়েকজন রক্ত চোষাদের ডেকে নিয়ে এসো।

মাদাম মালকিন ওদের মারমূর্তি দেখে অসম্ভব ভয় পেয়ে দুহাতে নিজের বুক চেপে ধরলেন।

শোনো শোনো তোমরা দোকানে দাঁড়িয়ে সর্বনেশে কাণ্ড-কারখানা করবে না, তোমরা সবাই বাইরে চলে যাও। মাদাম মালকিন শেষ চেষ্টা করলেন।

কিন্তু মাদাম মালকিনের ধমক শুনেও হ্যারি ওর হাতের দণ্ড নামালো না। নারসিসা ম্যালফয় বিরক্তিমাখানো মুখে বললেন, পটার তুমি ডাম্বলডোরের প্রিয়, তার কাছের লোক তাই তোমার সাহস বেড়েছে। এখানে ডাম্বলডোর এসে তোমাকে রক্ষা করবেন ভেবেছো?

হ্যারি ডোন্ট কেয়ারভাবে সমস্ত দোকানটা দেখতে লাগলো।

ওয়াও… দেখো, তাকিয়ে দেখো, উনিতো এখন এখানে নেই। তাহলে এসো লড়াই করি? আজকাবানে আপনি ও ড্রেকোর জন্য অবশ্যই দুটো সেল পেয়ে যাবেন… স্বামী যখন সেখানেই!

ম্যালফয় প্রচণ্ড রেগে হ্যারির দিকে এগিয়ে গেলো, কিন্তু লম্বা রোবস পরার জন্য হোঁচট খেয়ে পড়ে গেলো। রন হো হো হো করে হেসে উঠলো।

ম্যালফয় চীৎকার করে বললো, আমার মায়ের সাথে এমন বিশ্রিভাবে কথা বলবে না পটার।

ঠিক আছে ড্রেকো, নারসিসা বললো, ড্রেকোকে ওঠাতে ওঠাতে। ওর থুতনিতে সরু সরু সাদা আঙ্গুল ঠেকালো। পটারের সিরিয়াসের কাছে যাওয়ার আর দেরি নেই ড্রেকো, লুসিয়াসের কাছে আমার যাবার আগেই ও যাবে।

হ্যারি ওর জাদুদণ্ডটা আরো একটু ওপরে তুললো। হারমিওন হাত বাড়িয়ে হ্যারিকে বাধা দেয়ার জন্য বললো, না না হ্যারি না!

হ্যারি তেমনিভাবে উদ্ধত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো, হারমিওন হ্যারির হাতটা চেপে ধরে পাশে টেনে নিয়ে বললো, এখানে এসব কিছু করবে না হ্যারি, অনেক গোলমাল হতে পারে।

মাদাম মালকিন অসহায়ের মতো আসন্ন রণক্ষেত্রের দিকে এমনভাবে তাকালেন যেন সবই স্বাভাবিক। আশা করলেন ওরা আর গোলমাল পাকাবে না। উনি ম্যালয়ের দিকে ঝুঁকলেন, ম্যালফয় তখন হ্যারির দিকে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো।

আমার মনে হয় তোমার বাঁ হাতের দিকটা একটু ঝুলে রয়েছে। স্থির হয়ে দাঁড়াওতো দেখি, আমি ঠিক করে দিচ্ছি।

আউচ! ম্যালফয় বিকৃত স্বরে কথাটা বলে মাদাম মালকিনের হাতটা ঠেলে সরিয়ে দিল। দেখো কোথায় পিন বিধিয়েছে, ভদ্রমহিলা! মা, আমি এই জঘন্য রোবসটা চাই না।

কথাটা বলে ড্রেকো রোবসটা টেনে হিঁচড়ে খুলে ফেলে মাদাম মালকিনের পায়ের কাছে ছুঁড়ে ফেলে দিলো।

ঠিক বলেছো ড্রেকো, নারসিসা বললো, হারমিওনের দিকে ঘৃণাভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে। আমি জানি কিসব জঘন্য মাল এই দোকানে থাকে। চলো আমরা টুইলফিট অ্যান্ড ট্যাটিংগসে যাই।

কথাটা বলে নারসিসা আর ড্রেকো দোকান ছেড়ে গজগজ করতে করতে চলে গেল। যাবার সময় ও রনকে যতোটা গায়ের জোর আছে তা দিয়ে ধাক্কা মেরে গেল। ওহো তাই নাকি? মাদাম মালকিন পায়ের কাছে পড়ে থাকা ধূলো মাখা রোবসটা তুলে নিয়ে, হাতের জাদুদণ্ডটা ঠেকালেন। মুহূর্তের মধ্যে রোবস ঝকঝক করে উঠলো। জাদুদণ্ডটা ভ্যাকুয়াম ক্লিনারের কাজ করলো।

ওরা চলে গেলে মাদাম মালকিন রন আর হ্যারিকে নিয়ে পড়লেন। মোটামুটি ওদের ফিটিংস রোবস দিয়ে, হারমিওনকে ডাইনির রোবস না দিয়ে জাদুকরের রোবস দিলেন। ওরা কেনাকাটা করে দোকান ছেড়ে চলে গেলে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন।

হ্যাগ্রিড ওদের দেখে বললেন, সব ঠিক ঠাক?

একটি কথা, হ্যারি বললো। আচ্ছা আপনি কি ড্রেকোকে আপনার সামনে দিয়ে যেতে দেখেছেন?

হ্যাঁ দেখলাম বটে। হ্যাগ্রিড সাধারণভাবে বললেন। হ্যারি কোনো চিন্তা করবে না। ডায়াগন এ্যালিতে ওরা কোনো গোলমাল পাকাতে সাহস করবে না।

হ্যারি, রন, হারমিওন হ্যাগ্রিডের কথা শুনে মুখ চাওয়া চাওয়ি করলো। হ্যাগ্রিডের ওই কথার উত্তরে কিছু বলার আগেই সেখানে মিস্টার মিসেস উইসলি এসে দাঁড়ালেন।

 মিসেস উইসলি বললেন, কোনো গোলমাল করোনিতো? রোবস কিনেছো? ঠিক আছে তাহলে চলো আমরা যেখানে ওষুধ-টষুধ বানায় সেখানে আর ইয়েলপস এ একটু ছুঁ মেরে আসি। ওখানে ফ্রেড আর জর্জের সঙ্গে দেখা হয়ে যাবে, তোমরা দূরে দূরে থেকো না, কাছাকাছি থেকো। নাম্বারটা বোধহয় নাইনটি, টু… নাইনটি ফোর…

হ্যারি ও রন পোশান পড়ছে না তাই ওষুধের দোকানের জড়ি বটি ওদের। দরকার নেই। ওরা তাই হেডউইগ ও পিগউইজিয়নের ঈলপস আউল এমপোরিয়ামে গিয়ে বড় বড় বাদাম কিনলো। তারপর উইসলিদের খোঁজার জন্য সোজা রাস্তা ধরে চললো। উইজার্ড হুইজেসে, ফ্রেড আর জর্জ জোক শপ খুলেছে।

মিসেস উইসলি ঘড়ি দেখে বললেন, আমরা বেশি দূরে যাবো না, কাছাকাছি দেখে আমরা গাড়িতে ফিরে যাবো আমরা বোধহয় ওদের দোকানের কাছাকাছি এসেছি, ওই তো নাম্বার বিরানব্বই, চুরানব্বই।

রন ওর পথ থেকে সরে গিয়ে বললো, ওয়াও…।

একঘেয়ে পোস্টার সাঁটা দোকান দেখতে দেখতে ওরা সকলেই ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিল, সামনেই ফ্রেড আর জর্জের দোকানের সাইনবোর্ড আর ডেকরেশন দেখে ওরা তাজ্জব বনে গেলো। সাজানো গোছানো ঝকঝকে তকতকে দোকান। বিক্রি করার নানা সামগ্রীর সংখ্যা কম নয়। নানা রকমের জিনিস দেখলে মন চায় কিনতে। ওদের দোকানের ডানধারের জানালা মিনিস্ট্রির বিরাট এক পোস্টারে ঢাকা পড়ে গেছে, কিন্তু পাশেই হলুদ অক্ষরে লেখা সুন্দর সাইনবোর্ড।

আরে! কেন আপনারা ইউ-নোহর জন্য ভীত-চিন্তিত?

বরং আপনারা ইউ-নো-পুর জন্য উদ্বিগ্ন হবেন। কোষ্ঠকাঠিন্য অনুভূতি আমাদের সমগ্র দেশকে কাবু করে রেখেছে।

ফ্রেড-জর্জের দোকানের সাইনবোর্ড দেখে হ্যারির হাসি থামে না। পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন মিসেস উইসলি। কানে এলো মৃদু আতঙ্কের ধ্বনি! দেখলে মিসেস উইসলি হতবাক হয়ে তাকিয়ে রয়েছেন সেই জানালার পাশে টাঙ্গানো পোস্টারের দিকে। পোস্টারটি পড়ে তার ঠোঁট দুটো মৃদু মৃদু কাঁপছে।

ওরা তাদের বিছানায় নিহত হবে! মিসেস উইসলি চাপা গলায় বললেন।

-তা হবে না! রন বললো, ও ঠিক হ্যারির মতোই হাসছিল। দারুণ পোস্টার হয়েছে।

ওরা দুজনে দোকানের মধ্যে ঢুকলো। দোকান ভর্তি ক্রেতা। হ্যারিতো তাকের কাছে পৌঁছতেই পারলো না। সে শুধু এধার ওধার তাকিয়ে রইলো।

বাক্সের স্তূপ দেয়ালের দিকে থরে থরে সাজানো রয়েছে, সেগুলা ঘরের সিলিং পর্যন্ত গিয়ে ঠেকেছে। একদিকে সিকডিং স্ন্যানবকস রয়েছে, ওরা ওটি হোগার্টসে ফাইনাল ইয়ারে পড়ার সময়ে বানিয়েছিল। হ্যারি লক্ষ্য করল, খুব বিক্রি হয়েছে। তাকে একটা মাত্র পড়ে রয়েছে।

হ্যারি, হারমিওন, ফ্রেড, জর্জের জোক শপে নানারকম মজার মজার জিনিস নেড়ে চেড়ে দেখতে লাগল। ওরা ছেলে-মেয়েদের ভিড় ঠেলে জিনিসপত্র রাখা তাকের কাছে পৌঁছেছে। ফ্রেড়-জর্জ এতো মজার মজার জিনিস বানিয়েছে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না।

ফ্রেড জর্জ আর হারমিওন, হ্যারিকে দেখে এগিয়ে এলো।

হ্যারি তুমি কেমন আছো? ওরা হ্যারির সঙ্গে করমর্দন করার পর হারমিওনের দিকে তাকালো। হারমিওনের চোখের কালো দাগ আর ফোলা দেখে জিজ্ঞেস করল, তোমাদের চোখে কি হয়েছে হারমিওন।

তোমার পাঞ্চিং টেলিস্কোপের দৌলতে হয়েছে।

হায়, ওটাতো ব্যারোতে ফেলে এসেছি। নিয়ে আসতে একদম ভুলে গেছি, ফ্রেড বললো, এই নাও।

ফ্রেড পকেট থেকে একটা ছোট টিউব বার করে হারমিওনের হাতে দিল। হারমিওন টিউব টিপতেই হলুদ বর্ণের খানিকটা পেস্ট বেরিয়ে এলো।

পেস্টটা চোখের তলায় খুব সাবধানে মালিশ করো। আশাকরি ঘন্টাখানেকের মধ্যে সেরে যাবে, ফ্রেড বললো। আমরা খুব ভাল একটা ব্রুইজ রিমুভার বানাবার চেষ্টা করেছি, এখনও পেস্টটা টেস্টিং পর্যায়ে আছে। পেস্টটার টিউব হাতে নিয়ে চোখের ফোলা জায়গায় লাগাতে সাহস হলো না হারমিওনের। একটু নার্ভাস হয়ে বললো, লাগালে কোনো ক্ষতি হবে না তো?

ফ্রেড বললো, ক্ষতি কেন হবে? সম্পূর্ণ নিরাপদ। হ্যারি চল আমরা কি করছি দেখবে এসো।

হ্যারি ও হারমিওন কালো হয়ে যাওয়া চোখে পেস্ট লাগাচ্ছিলো। হ্যারি ওকে রেখে ফ্রেডের সাথে ওর দোকানের পেছনের দিকে গেল। সেখানে গিয়ে দেখলো তাস ও রশির যাদু খেলার অনেক জিনিস।

এগুলো মাগলদের ম্যাজিক, ফ্রেড তাদের খেলনাগুলো দেখিয়ে বললো। ড্যাডের মত আমুদে মানুষেরা এ সকল মাগলদের খেলনা পছন্দ করে। খুব বেশি অর্থ উপার্জন না হলেও মোটামুটি ভালই চলছে, নিশ্চিত কিছু উপার্জন হয়, আর এখানে সৌখিন জিনিসপত্র… ও এখানে দেখছি জর্জ… ফ্রেডের ভাই জর্জ খুব আগ্রহভরে হ্যারির সাথে হাত মেলালো এবং ফ্রেডের দিকে তাকিয়ে বললো, ওকে কী সব দেখাচ্ছে। এখানে আস হ্যারি, দেখ… এখানকার জিনিসই আমাদের

আসল পয়সাটা দেয়, বেশ দামি… গ্যালিয়নে,.. গ্যালিয়নে তো সারতে হয়। তারপরই একটা ছোট ছেলেকে সাবধান করে বললো, না না ওখানে হাত দিও না। ছেলেটি দ্রুত তার হাতটি তুলে নিল –একটা কৌটো, লেখা : এডিবল ডার্ক মার্ক যে কাউকে অসুস্থ করবে!

জর্জ এবার তাদের পেছনের পর্দাটা টানলো, ওখানে সারি সারি প্যাকেট। জর্জ প্যাকেটগুলোর দিকে তাকিয়ে বললো, এগুলো একটু ভিন্ন জিনিস, আমাদের উন্নততর কাজ। কেমন করে জান… আমরা এগুলো উদ্ভাবনে এগুলাম…

তুমি বিশ্বাস করবে না যে অনেকেই এমনকি মিনিস্ট্রির লোকেরাও ভাল শিল্ড চার্ম করতে পারে না। তুমি তো জান এটা, জিনস দুর্ভাগ্য আনে, তুমি এটা পড়ে কাউকে বললো–তো যাকে দুর্ভাগ্য করার জন্য, দেখবে দুর্ভাগ্য ওর কাছে বাউন্স করে ফিরে যাবে।

মিনিস্ট্রি তার লোকদের জন্য পাঁচশটা কিনেছে। আরো কিনবে। প্রচুর বিক্রি হচ্ছে এটা। আমরা আরো করছি শিল্ড ফ্লোক, শিল্ড গ্লোভস ইত্যাদি। এগুলো হয়তো আনফরগিবল কার্স থেকে রক্ষা করবে।

সেখানে এক তরুণী ডাইনিকে সেই চকলেট রংয়ের রোবস পরা দেখলো হ্যারি। তরুণীটি বললো, মি, উইলসি এখানে এক কাস্টমার এসেছেন জোক কলড্রন কিনতে। হ্যারির যেন কেমন লাগলো ফ্রেড় আর জর্জকে মি. উইসলি বলে সম্বোধন করাটা।

হ্যারি তোমার যা পছন্দ নিজেই নাও, আমি একটু আসছি বলে সে চলে যাওয়ার সময় পেছনে তাকিয়ে বললো, কোন পয়সা দিতে হবে না।

না না তা কি করে হয়। বলে হ্যারি তার মানিব্যাগ থেকে ডেকর ডেটোনেটরের জন্য মুদ্রা বের করলো।

না, তোমাকে এখানে দাম দিতে হবে না বলে হ্যারির স্বর্ণ হাত দিয়ে সরিয়ে দিল।

কিন্তু

তোমার মনে আছে আমরা যখন এই ব্যবসা শুরু করি তখন তুমি আমাদের অর্থ দিয়ে সাহায্য করেছিলে। জর্জ বললো, তোমার যা ইচ্ছে এখান থেকে নাও, আর লোকেরা জিজ্ঞেস করলে বলবে কোথা থেকে এনেছো। এ সময় জিনি ও মিসেস উইসলি ভেতরে এলেন।

জিনি বললো, আমি কি একটা পিগমি পাফ নেবো না? মিসেস উইসলি বললেন, কী নেবে? কি মিষ্টি দেখতে মা….। মিসেস উইসলি জিনির হাত ধরে পিগমি পাফ দেখতে গেলেন। হারমিওন,

রন, হ্যারি জানালার কাছে দাঁড়িয়ে বাইরে রাস্তার ভিড় দেখছিল। দেখতে দেখতে চোখ পড়ে ড্রেকো ম্যালফয় একা একা হেঁটে চলছে। সে উইসলিদের উইজার্ড হুইজেস পেরোতেই পিছনে ফিরে তাকাল। তারপর একটু জোরে জোরে হাঁটতে লাগল। তখন ও তিনজনের দৃষ্টির বাইরে চলে গেল।

হ্যারি আশ্চর্য হয়ে বললো, একা একা যাচ্ছে, ওর মা গেলেন কোথায়? রন বললো, মার চোখ এড়িয়ে পালাচ্ছে। যেতে দাও। হারমিওন বললো, কেন, যাচ্ছে কোথায়?

হ্যারির মাথায় কিন্তু অন্য চিন্তা, নিশ্চয়ই ম্যালফয় কিছু একটা করতে যাচ্ছে। নারসিসা ম্যালফয় তার পুত্র রত্নটিকে কখনই চোখের আড়ালে যেতে দেবেন না। ম্যালফয় মার কাছ থেকে পালানোর জন্য নিশ্চয়ই অনেক বুদ্ধি খাটিয়েছে। যে ভাবেই ও যাক না কেন ব্যাপারটা লঘু করে হ্যারি দেখতে চাইল না।

হ্যারি দেখলো মিসেস উইসলি আর জিনি পিগমি পাফ নিয়ে খুবই ব্যস্ত। ওদিকে মিস্টার উইসলি মাগল ছাপের তাশ কেনা নিয়ে উল্টেপাল্টে দেখছেন। ফ্রেড-জর্জও দোকানের খদ্দের নিয়ে ব্যস্ত। ওদিকে রাস্তায় ত্যাগ্রিড পিছন ফিরে দাঁড়িয়ে রয়েছেন।

হ্যারি ওর অদৃশ্য হবার ক্লোকটা ব্যাগ থেকে বার করে হারমিওনকে বললো, দেরি নয়, তাড়াতাড়ি চলো।

হারমিওন মিসেস উইসলির দিকে তাকালো! কোথায় যাবো?

রন বললো, আরে চলো তো।

হারমিওন প্রথমে দোনোমনোভাব দেখালেও তারপর হ্যারির ক্লোকের মধ্যে ঢুকে তিনজনে দোকান থেকে বেরিয়ে গেল। কেউ ওদের দেখতে পেল না, যে যার কেনাকাটা নিয়ে ব্যস্ত। ওরা দ্রুতগতিতে রাস্তায় দাঁড়ালো। কিন্তু ততক্ষণে ম্যালফয় ওদেরই মতো তাড়াতাড়ি ভিড়ে মিশে গেছে।

হ্যারি খুব আস্তে আস্তে বললো, ও ওই দিকটায় গেছে। ওরা হ্যাগ্রিডের চোখে ধূলো দিয়ে যেতে চায়।

ওরা এধার ওধার তাকাতে তাকাতে যতদূর সম্ভব জোরে জোরে হাঁটতে লাগল।

খানিকটা যাওয়ার পর হারমিওন ফিস ফিস করে বললো, এই… ওই যে… ও যাচ্ছে। এ-তো বাঁ দিকে যাচ্ছে।

রনও ফিস ফিস করে বললো, আশ্চর্য ব্যাপার… যাচ্ছে কোথায়? ওদিকে ম্যালফয়ও এধার ওধার তাকিয়ে নকটার্ন এ্যালির দিকে ঘুরে অদৃশ্য হয়ে গেল।

হ্যারি এক সেকেন্ড সময় নষ্ট না করে বললো, তাড়াতাড়ি… পা চালিয়ে চলো। হারমিওন বললো, আমাদের পা দেখা যাচ্ছে। একজনের অদৃশ্য হওয়ার ক্লোকের মধ্যে তিনজনে অদৃশ্য হয়ে যাওয়া যায় না।

এখন এসব ভাবার সময় নয়, পা চালাও… ও কোথায় যাচ্ছে জানতে হবে।

কিন্তু ডাকআর্টস অধ্যুষিত নকটার্ন এ্যালির পাশের রাস্তা বলতে গেলে জনশূন্য, সুনসান। রাস্তার ধারে যতো দোকান পড়লো একটি দোকানেও তারা কাঁচের জানালা দিয়ে দোকানের ভেতরে ম্যালফয়কে কেন কোন লোককেই দেখতে পেলো না। হ্যারির ধারণা হয়তো এই রকম ভয়ঙ্কর ও সন্দিগ্ধ সময়ে ডার্ক আর্টিফ্যাক্টস কিনতে লোকেরা ভয় পাচ্ছে। শুধু তাই নয়, দোকানে ঢুকতেও ওদের পা কাঁপে কেউ যদি দেখে ফেলে সেই ভয়ে।

হারমিওন হ্যারির হাতে চিমটি কাটলো।

উঃ।

হারমিওন বললো, ত্য…। তারপর হ্যারির কানের কাছে মুখ এনে বললো, ওই দেখো কে যাচ্ছে।

ওরা পা টিপে টিপে নকটার্ন এ্যালির একটি মাত্র দোকান বোরজিন অ্যান্ড বার্কসের সামনে দাঁড়ালো। দোকানটায় হ্যারি জীবনে কখনো ঢোকেনি। ওখানে নানা রকমের ভীতিকর জিনিসপত্র পাওয়া যায়–মাথার খুলি, পুরনো দিনের শিশি বোতল। ওরা বাইরে থেকে দেখলো ড্রেকো ম্যালফয় দোকানের ভেতরে ওদের দিকে পিছন দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। ড্রেকো ম্যালফয়কে কালো একটা ক্যাবিনেটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে হ্যারির মনে পড়ে গেল একবার ও ড্রেকো আর লুসিয়াসের হাত থেকে বাঁচার জন্য এরকম একটা কালো ক্যাবিনেটে লুকিয়েছিল। ম্যালফয়ের দাঁড়ানোর ভঙ্গি ও হাতনাড়া দেখে মনে হলো খুব উত্তেজিত হয়ে কথা বলছে। দোকানের মালিক তেলতেলে চুলওয়ালা কুজ-বৃদ্ধ মি. বোরজিন তার সঙ্গে কথা বলছে। মনে হলো ওরা খুব সিরিয়াস কিছু আলোচনা করছে। বৃদ্ধের চোখে মুখে ভয় মিশ্রিত ছাপ।

হারমিওন বললো, ওদের কথা যদি শোনা যেত। শুনতে পারা যাবে, রন বললো। তারটা ঝুলিয়ে দাও।

রন ওর হাতের বড় বাক্সটা থেকে একটা তার বার করে বললো, এই দেখো এক্সটেনডেবল ইয়র্স! উঃ এই তো পেয়েছি, ভাগ্যিস কিনেছিলাম।

চমৎকার, হারমিওন বললো। রন একটুও সময় নষ্ট না করে ছোট মাইক্রোফোন লাগানো তারটা দোকানের দরজার তলার দিকে চুপিসারে লাগিয়ে দিল। মনে হয় দরজাটা বন্ধ হলেও যন্ত্রটা কাজ করবে। হারমিওন বললো।

রন বললো, চুপ, শোনো…। ওরা তিনমাথা কাছে নিয়ে তারের মুখে কান রাখলো। ম্যালফয়ের কথাবার্তা পরিস্কার শুনতে পেলো অনেকটা রেডিওর মতো।

আপনি জানেন কেমন করে ওটা লাগাতে হয়?

খুব সম্ভব, বোরজিন বললেন। এমনভাবে বললেন যেনো ম্যালয়ের কোন ব্যাপারে নিজেকে জড়াতে চান না। আমাকে নিজের চোখে দেখতে হবে… তা তুমি ওটা সঙ্গে করে দোকানে নিয়ে এলে না কেন?

সম্ভব নয়, ম্যালফয় বললো। ওটা লাগাতে হবে, আপনি শুধু আমাকে বলন কেমন করে লাগাতে হয়?

হ্যারি দেখলো বোরজিন ঠোঁট দুটো ভয়ে ভয়ে জিব দিয়ে চাটলো।

শোনো, না দেখে, আমি বলছি কাজটা খুব কঠিন, বলতে পারো অসম্ভব। আমি কিন্তু কোনো গ্যারান্টি দিতে পারছি না।

দিতে পা র বো না? ম্যালফয় চিবিয়ে চিবিয়ে বললো। হ্যারি ম্যালয়ের গলার শব্দ শুনে বুঝতে পারলো ম্যালফয় বোরজিনের কথা সম্পূর্ণ অবিশ্বাস্য ভাবছে। তার মানে আপনি করতে চান না।

ম্যালফয় বোরজিনের দিকে এগিয়ে গেলো তারপর ক্যাবিনেটের আড়ালে চলে গেল। হ্যারি রন আর হারমিওন একপাশে সরে গেল, উঁকি ঝুঁকি মেরে ওকে দেখার চেষ্টা করলো, কিন্তু ম্যালয়কে দেখতে পেলো না। কিন্তু বোরজিনকে দেখা গেল। তাকে খুবই আতঙ্কিত মনে হলো।

কাউকে এ বিষয়ে বললে বুঝতেই পারেন, ম্যালফয় বললো, কী উত্তর আপনি পাবেন। আপনি ফেনরির গ্রেব্যাকের নাম শুনেছেন? উনি আমাদের পরিবারের বন্ধু, উনি মাঝে মাঝে এসে দেখে যাবেন আপনি এ কাজটি মনোযোগ দিয়ে করছেন কি না।

তার কোনো প্রয়োজন হবে না।

সে আমি ঠিক করবো, ম্যালফয় বললো। যাকগে এখন আমি চলি। আর সেটা খুব সাবধানে রাখবেন, আমার দরকার হবে।

তুমি ইচ্ছে করলে এখনই ওটা নিয়ে যেতে পারো?

না, অবশ্যই না। মূর্খ বুড়ো ওটা রাস্তাতে হাতে করে নিয়ে গেলে কেমন দেখাবে? ওটা বিক্রি করবে না বলে দিলাম।

না স্যার নিশ্চয়ই বিক্রি করবো না।

বোরজিন ম্যালয়ের সামনে মাথা নত করলো। অনেকদিন আগে হ্যারি বোরজিনকে লুসিয়াস ম্যালয়ের সামনে একইভাবে মাথা নোয়াতে দেখেছিলো।

বোরজিন, আমার সঙ্গে আপনার যে কথাগুলো হলো তা গোপন রাখবেন, কাউকে একটি শব্দও বলবেন না, এমনকি তার মধ্যে আমার মাও আছেন। ভালো করে বুঝতে পেরেছেন তো?

বোরজিন ঠিক আগের মতো মাথা নুইয়ে বিড়বিড় করে বললো, হ্যাঁ স্যার… কাউকে না।

একটু পর ম্যালফয় ঔদ্ধত চালে দোকান থেকে বেরিয়ে আসার সময় দরজাটার ঘন্টিটা বাজলো। ওর মুখ দেখে হ্যারিদের মনে হলো ও খুশিতে ডগমগ।

হ্যারি, রন ও হারমিওনের পাস দিয়েই ম্যালফয় গেল কিন্তু অদৃশ্য ক্লোক পরে থাকায় ওদের দেখতে পেলো না। দোকানের ভেতর বোরজিন পাথরের মতো দাঁড়িয়ে, ওর মুখের কৃত্রিম হাসি মিলিয়ে গেছে। খুবই চিন্তিত মনে হলো।

রন এক্সটেনডেবল তার গোটাতে গোটাতে বললো, ব্যাপারটা বোঝা গেলো।

হ্যারি চিন্তান্বিত মুখে বললো, বুঝলাম না। এইটুকু বুঝলাম একটা কিছু ও সারতে দিতে চায়, দোকানেই রেখে…. আচ্ছা ও যখন ওইটে বললো, তার মানে কোনটা?

দেখিনি, ওতো ক্যাবিনেটের আড়ালে ছিলো। হারমিওন ফিসফিস করে বললো, তোমরা এখানে দাঁড়াও আমি আসছি। কোথায় যাচ্ছো?

হারমিওন প্রশ্ন করার আগেই ক্লোকের বাইরে চলে এসেছে। বোরজিনের দোকানের সামনে এসে জানালার কাঁচে চুলগুলো ঠিক করে নিয়ে গটগট করে দোকানে ঢুকলো, ঢোকার সময় দরজা লাগানো ঘন্টিটা টং করে বেজে উঠলো। রন একটুও সময় নষ্ট না করে এক্সটেন্ডেবল ইয়ার্স দরজার কাছে আবার লাগিয়ে, একটা তার হ্যারির কাছে টেনে আনলো।

 দোকানে ঢুকে হারমিওন বললো, কী বাজে সকাল! তাই নয় কি! দোকানী কোন উত্তর করলো না। হারমিওন একটু হেঁটে একটা শোকেসের সামনে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো, এই নেকলেসটা কি বিক্রির জন্য? ঝুঁকে পড়ে গ্লাসকেসের মধ্যে রাখা নেকলেসটা দেখতে লাগলো।

বোরজিন ক্যাটক্যাট করে বললো, হ্যাঁ, তবে তোমার কাছে কি দেড় হাজার গ্যালিওন আছে?

ওহ নেই তো, হারমিওন বললো। তারপর সরে গিয়ে অন্য একটা মাথার খুলি দেখিয়ে বললো, বাঃ বড়ো সুন্দরতো… এটার দাম?

ষোলো গ্যালিওন। এটা তাহলে বিক্রির জন্য রেখেছেন, কেউতো এটা কিনবে বলে যায়নি?

বোরজিন কথাটা শুনে ভুরু কুঁচকালো। হ্যারি জানে হারমিওন কেন দোকানে গেছে। পেটের ভেতরটা গুড় গুড় করে উঠলো। আড়চোখে বাইরে তাকালো।

বলছিলাম, একটু আগে যে ছেলেটি আপনার দোকানে এসেছিল সে ড্রেকো ম্যালফয়। ও আমার বন্ধু, আমি ওকে ওর জন্মদিনে একটা কিছু উপহার দিতে চাই,

তো এই সকালটা খুব সুন্দর, ও যদি এটাকে কিনবে বলে আপনাকে বলে গিয়ে থাকে, তাহলে একই জিনিস উপহার দেওয়া কি ঠিক হবে… তাই…।

হ্যারির মনে হলো হারমিওনের কথা যুক্তিগ্রাহ্য নয়, ও যে ফাঁকি দিচ্ছে এটা বোরজিনও বুঝবে। হারমিওন মিথ্যে কথা বলছে বোরজিন বুঝতে পারলো।

যাও, বোরজিন কর্কশ স্বরে বললো, বেরিয়ে যাও দোকান থেকে।

হারমিওন কালবিলম্ব না করে দোকান থেকে বেরিয়ে আসার জন্য দরজার কাছে এলো। ওর পেছনে বোরজিন। বোরজিন দোকানের দরজাটা শব্দ করে বন্ধ করে দিল। তারপর বন্ধ দরজায় ঝুলিয়ে দিল দোকান বন্ধ।

রন অদৃশ্য হবার ক্লোকটা হারমিওনের গায়ে চাপিয়ে দিয়ে বললো, বাঃ বাঃ সুন্দর, ভালোই চেষ্টা করলে কিন্তু ধরা পড়ে গেলে।

মাস্টার অব মিস্ট্রি পরের বার আমাকে শিখিও কেমন করে করতে হবে, হারমিওন কটকট করে বললো।

 রন ও হারমিওন উইজার্ড হুইজেস পৌঁছলো। দেখলো মিসেস উইসলি আর হ্যাগ্রিড ওদের না দেখতে পেয়ে খুব চিন্তিত হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। হ্যারি ওর অদৃশ্য হবার ক্লোকটা খুলে ফেললো, ব্যাগের মধ্যে লুকিয়ে রন আর হারমিওনের পাশে এসে দাঁড়ালো। মিসেস উইসলি ওদের দেখে বললেন, তোমরা কোথায় ছিলে? রন বললো, কেন, আমরা তো দোকানের পেছনের ঘরে জিনিসপত্র দেখছিলাম।